চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানবপাচার চক্রের অন্যতম হোতা ইফতেখারুল আলম রনিকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাত ৮টায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ইফতেখারুল আলম রনি ফেনী জেলার ফজিলপুর গ্রামের নুরের জামানের ছেলে। তার পাসপোর্ট নম্বর A04761716। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে, রনি দীর্ঘদিন ধরে মানবপাচারের একটি বড় নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একাধিক মামলা রয়েছে।
অভিযান ও গ্রেপ্তারের বিস্তারিত
রনি শনিবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১৪৭ ফ্লাইটে দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) পক্ষ থেকে গোপন তথ্য পাওয়ার পর বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশ দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেপ্তার করে।
বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইমিগ্রেশন পুলিশ সফলভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে। রনি মানবপাচারের চক্রের একজন সক্রিয় নেতা এবং এই চক্রের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত।”
গ্রেপ্তারের পর রনিকে পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৬, ৭, ৯ এবং ১০ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার পেছনের ঘটনা
ইফতেখারুল আলম রনির বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর মধ্যে একটি কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ রয়েছে। এটি গত ৮ জানুয়ারি দায়ের করা হয়। এছাড়া শনিবার (১১ জানুয়ারি) কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানায় তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ইমিগ্রেশন পুলিশ জানায়, রনি ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সের (এনএসআই) টপ লিস্টেড অপরাধীদের মধ্যে একজন। তাকে গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে মানবপাচার চক্রের একটি বড় নেটওয়ার্ক ভাঙার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
মানবপাচারের ভয়াবহতা
বাংলাদেশে মানবপাচার একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ দেওয়ার নামে প্রতারণা করে অসংখ্য মানুষকে পাচার করা হয়। অনেক সময় এই মানুষরা সেখানে গিয়ে চরম দুরবস্থার শিকার হন।
ইফতেখারুল আলম রনি এই ধরনের চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে নজরদারিতে ছিলেন। তার গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এই চক্রের কার্যক্রমের পেছনের মূল নেটওয়ার্কের তথ্য উদঘাটনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সফলতা
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ এবং এনএসআই যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করে। তাদের এই সফলতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতা এবং মানবপাচার দমনে তাদের অঙ্গীকারের প্রমাণ।
বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের নিয়মিত নজরদারি এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কারণে এমন অপরাধ দমনে সফলতা পাচ্ছি। মানবপাচার বন্ধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখব।”
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
রনির গ্রেপ্তারের পর মানবপাচার চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে আরও অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রনির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই চক্রের অন্য নেতাদেরও আইনের আওতায় আনার প্রস্তুতি চলছে।
মানবপাচার বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এ ধরনের গ্রেপ্তার এবং শাস্তি মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে।
উপসংহার
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত ইফতেখারুল আলম রনির গ্রেপ্তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একটি বড় সাফল্য। তার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে মানবপাচার চক্র ভাঙার কাজ আরও এগিয়ে নেওয়া হবে বলে আশা করা যায়।
আপনার মতামত লিখুন :