কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার সাগরদ্বীপ এ দেশের প্রথম এবং বৃহত্তম বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে অচল অবস্থায় রয়েছে। ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি প্রকল্প অনিয়ম, দুর্নীতি ও তদারকির অভাবে পুরোপুরি পরিত্যক্ত। যা এখন শুধুই দেখার জিনিস। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন এ প্রকল্পের অর্থ আসলে অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয় এবং এটি এখন তাঁদের জন্য বোঝায় পরিণত হয়েছে।
২০০৭ সালে প্রথম প্রকল্পটি আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের তাবলেরচর এলাকার পশ্চিম সৈকতে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১ মেগাওয়াট। ২০০৮ সালের ১৫ মার্চ এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় এবং প্রথমে ৬০০ গ্রাহকের মাঝে সন্ধ্যাবেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১০ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর কেন্দ্রটি আর চালু করা সম্ভব হয়নি।
২০১৬ সালে প্রথম প্রকল্পের পাশে আরও একটি বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়, যা নির্মাণে খরচ হয় ২৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এটি ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ চালু করা হয় এবং ৩৫০ জন গ্রাহকের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। তবে, এক মাসের মধ্যেই যন্ত্রপাতি অচল হয়ে যাওয়ার ফলে এ কেন্দ্রটিও বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে প্রকল্প দুটি সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দোতলা ভবনের ভেতরে থাকা ১,০০০ ব্যাটারি ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। ভবনগুলোতে তালা ঝুলছে এবং উইন্ড টারবাইনগুলো মরিচা ধরে ভেঙে পড়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার নষ্ট অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আশপাশের জমিতে লবণ উৎপাদন চললেও প্রকল্পের সীমানা প্রাচীর ধ্বংস হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, এ প্রকল্প থেকে প্রচুর দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। প্রকল্প গ্রহণে স্থান নির্বাচন এবং তদারকির ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা ছিল তার ফলেই প্রকল্পটি ব্যর্থ হয়েছে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ খান বলেন, অপ্রতুল পরিকল্পনার কারণেই এটি সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি সরকারি অর্থ অপচয়ের একটি লজ্জাজনক উদাহরণ।
পরবর্তীতে কুতুবদিয়া দ্বীপে ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল সাবমেরিন কেবল এর মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হওয়ার পর পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে ৯,৭০০ গ্রাহক বিদ্যুৎ পাচ্ছেন, যার চাহিদা ২.৫ মেগাওয়াট। এখন লোডশেডিংয়ের সমস্যাও নেই।
দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য, চাষাবাদ, পোলট্রি, মৎস্য খামার এবং কুটিরশিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। দ্বীপের বাসিন্দারা সামুদ্রিক মাছ, শুঁটকি, তরমুজসহ নানা কৃষিপণ্যে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি প্রকল্প সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হলেও জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযোগ কুতুবদিয়ার মানুষের জীবনমান উন্নত করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :