বিএনপির চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ এক যুগ পর ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে গেছেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তিনি বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে রওনা দেন।
বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছালে তাকে অভ্যর্থনা জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান।
খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সেনাকুঞ্জের পরিবেশ আবেগঘন হয়ে ওঠে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়াকে দেখে আবেগে কেঁদে ফেলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন,
"আজ আমরা বিশেষভাবে সম্মানিত যে বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এখানে উপস্থিত হয়েছেন। ১২ বছর তিনি সেনাকুঞ্জে আসার সুযোগ পাননি। তাকে এই সুযোগ দিতে পেরে আমরা গর্বিত। দীর্ঘদিনের শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি এখানে উপস্থিত হয়েছেন। আমরা তার আশু রোগমুক্তি কামনা করি।"
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতরা
এ বছর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৬ জন বিএনপি নেতাকে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর আগে ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
মঙ্গলবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের চিফ অব জেনারেল স্টাফ লে. জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম এবং প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল এ এস এম কামরুল আহসান এ আমন্ত্রণপত্র নিয়ে তার গুলশানের বাসভবনে উপস্থিত হন। একই দিনে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামেও আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ উপস্থিতি
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০১২ সালে সেনাকুঞ্জে অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৩ সালে তিনি আমন্ত্রণ পেলেও যোগ দেননি। এরপরে প্রায় এক দশক বিএনপি নেতাদের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এবারের অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং আবদুল মঈন খানসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
দীর্ঘদিন পর প্রকাশ্য কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সিলেটে একটি কর্মসূচিতে অংশ নেন খালেদা জিয়া। এরপর বিভিন্ন কারণে তিনি প্রকাশ্যে দেখা দেননি।
সেনাকুঞ্জে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বিএনপি নেতাদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষত, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার প্রতি এ ধরনের সম্মান প্রদর্শন রাজনৈতিক মহলে নতুন বার্তা দিয়েছে।
শেষ কথা
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি সশস্ত্র বাহিনী দিবসের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার দীর্ঘ অনুপস্থিতি, শারীরিক অসুস্থতা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তার এ অংশগ্রহণকে বিশেষভাবে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :