দুই সন্তানের বাবা যশোরের জাফর হোসেনের ইউরোপে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। মাত্র চার মাস আগেই একটি এনজিও থেকে ৪ লাখ টাকা ও সুদের ওপর ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এবং স্বর্ণের গহনা বন্ধক রেখে মোট ৮ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাড়ি জমান তিনি।
তবে বিদেশে কর্মসংস্থানের পরিবর্তে তাকে দালাল চক্র রাশিয়ার সেনাবাহিনীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। বর্তমানে তাকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
জাফর হোসেন যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের বড় মেঘলা গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতা খায়রুল সরদার ও মাতা হাসিনা খাতুন। বাড়িতে স্ত্রী খাদিজা খাতুন দুই সন্তানকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় মানবপাচারের একটি বড় ফাঁদ তৈরি করেছে ঢাকার ড্রিম হোম ট্রাভেলস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ চক্র গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে প্রতারণার জালে ফাঁসাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া পর্যন্ত পুরো যাত্রাপথে চক্রের বিভিন্ন সদস্য সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
জাফরের পরিবার জানিয়েছেন, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর থেকেই দালাল চক্রের অত্যাচার শুরু হয়। যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এমনকি তাকে ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হচ্ছে না।
জাফরের মা হাসিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ছেলে জানিয়েছে, যুদ্ধ করতে গিয়ে একজন বাংলাদেশি মারা গেছে এবং আরেকজন গুরুতর আহত হয়েছে। এখন আমার ছেলেও বাংলাদেশে ফিরে আসতে চাইছে। না হলে তার মৃত্যু হবে। আমি সরকারের কাছে আমার ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছি।”
জাফরের স্ত্রী খাদিজা খাতুন জানান, সাইপ্রাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ড্রিম হোম ট্রাভেলসের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়েছিলেন তার স্বামী। তবে বিভিন্ন ধোঁকাবাজির মাধ্যমে তাকে রাশিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। এখন তাকে যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। যুদ্ধ না করলে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
জাফরের প্রতিবেশী তামিম হাসান বলেন, “জাফর খুবই নম্র ও ভদ্র ছেলে। বাড়িতে থাকতে জমিতে কাজ করতো এবং বাবার চায়ের দোকানেও সহযোগিতা করতো। বিদেশ যাওয়ার লোভে দালাল চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে আজ সে চরম বিপদে পড়েছে। তার পুরো পরিবার এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে।”
এ বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, "জাফর যেভাবে বিদেশে গিয়েছেন, সেই মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমরা পরিবারকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি।"
জাফরের পরিবার ও স্থানীয় জনগণ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে দ্রুত জাফরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং এই দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আপনার মতামত লিখুন :