বাংলাদেশ রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সংঘর্ষে আহত শতাধিক

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫, ১০:০২ এএম

কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সংঘর্ষে আহত শতাধিক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের সংঘর্ষে আহত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নিলয় আহমেদকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তাঁর সহপাঠীরা। মঙ্গলবার বিকেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা এই সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

রাতে শিক্ষার্থীরা এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, হামলাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবিগুলো বুধবার বেলা একটার মধ্যে পূরণ না হলে কুয়েটের সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।

কুয়েটে সংঘর্ষের জেরে রাতেই খুলনা নগরের শিববাড়ী মোড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা জিয়া হল চত্বরে মিছিল করেন, আর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা শিববাড়ী মোড় চত্বরে অবস্থান নেন। মাত্র কয়েক হাত দূরত্বে অবস্থান করায় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কুয়েটে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে। কুয়েটের সংঘর্ষের জেরে ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথকভাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদল।

সংঘর্ষের পেছনের কারণ

কুয়েট ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, গত ১১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় কুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে সম্প্রতি ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেসেঞ্জার গ্রুপে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া চলছিল। সোমবার ছাত্রদল ক্যাম্পাস এলাকায় লিফলেট বিতরণ করলে উত্তেজনা আরও বাড়ে।

মঙ্গলবার সকালে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা মিছিল বের করেন। উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করার সময় ছাত্রদল কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্মীরা ‘ছাত্ররাজনীতি ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস চাই’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন। কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে পৌঁছালে ছাত্রদল কর্মীরা তাঁদের উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

ক্যাম্পাসের বাইরের রেলগেট ও তেলিগাতি এলাকায় বিএনপির স্থানীয় কর্মীরা যোগ দিলে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলা এই সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

 

কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সংঘর্ষে আহত শতাধিক
কুয়েট ক্যাম্পাস থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকাতেওছবি: সংগৃহীত

দুই পক্ষের বক্তব্য

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব জাহিদুর রহমান বলেন, “আমাদের অন্তত ৫০ জন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা দেড় শতাধিক হতে পারে।”

ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পেছনে ছাত্রশিবির এবং নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠনের সদস্যরা আছেন, যারা ছাত্রদলের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে চায়।

খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সদস্যসচিব তাজিম বিশ্বাস বলেন, “ছাত্রশিবির ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতারা প্রথমে ছাত্রদলের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।”

অন্যদিকে খুলনা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন অভিযোগ করেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছে।”

কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সংঘর্ষে আহত শতাধিক
দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে কুয়েট ফটকের সামনের চিত্র। মঙ্গলবার বিকেলে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

কুয়েটের সংঘর্ষের পর রাত নয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে। একই সময় ডাস ক্যাফেটেরিয়া এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা বলেন, “বাইরের লোকজন ও হেলমেটধারীরা ইটপাটকেল ছুড়ে এবং অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালিয়েছে।”

কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সংঘর্ষে আহত শতাধিক
‘কুয়েটের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার রাতে টিএসসি এলাকা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও কুয়েটের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। কুড়িগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা হামলাকারীদের বিচারের দাবি জানান।

Link copied!

সর্বশেষ :