বাংলাদেশ সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

ক্ষমতায় টিকতে হাসিনা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে: জাতিসংঘ

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০৭:২১ এএম

ক্ষমতায় টিকতে হাসিনা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে: জাতিসংঘ

ক্ষমতা টিকতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল হাসিনা: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক

বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে এসেছে জাতিসংঘের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত সরকার বিক্ষোভ দমনে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেছিল, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে।

জাতিসংঘের তদন্তে যা উঠে এসেছে

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সরকারি সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে সহিংস কৌশল নিয়েছিল। এতে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে।

প্রতিবেদনে বলা হয়,

  • ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে ১,৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।
  • নিহতদের মধ্যে ১২ শতাংশ ছিল শিশু।
  • ১১,৭০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়।
  • নিরাপত্তা বাহিনী প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের টার্গেট করে গুলি চালায়।

জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, সিলেট ও গাজীপুরে সরেজমিনে তদন্ত চালায়। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ দমনে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দলীয় কর্মীদের অস্ত্র সরবরাহ করেন।

হাসিনাকে ক্ষমতা রাখতে পুলিশের নিশংস হত্যা

 

সরকারি উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার তথ্য

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজিবিকে আরও দ্রুত প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এর পরদিন, ১৯ জুলাই, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিক্ষোভকারীদের হত্যা ও লাশ গোপন করার নির্দেশ দেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা

প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, যদি কোনো অপরাধী বিদেশে আশ্রয় নেয়, তবে "ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন" নীতির আওতায় তাকে বিচারের মুখোমুখি করা যেতে পারে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার বলেন,
"যদি কোনো সরকার গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকে, তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) এর তদন্ত করতে পারে।"

বিচারপ্রক্রিয়া ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছে, তবে জাতিসংঘের মতে, দেশের বিচারব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে খাপ খায় না।

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান

 

জাতিসংঘের প্রতিনিধি রোরি মুনগোভেন বলেন,
"আমরা এমন বিচারে সহযোগিতা করতে পারি না, যা মৃত্যুদণ্ডের দিকে নিয়ে যায়। বাংলাদেশকে বিচারব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে।"

পরবর্তী করণীয়

জাতিসংঘের প্রতিবেদনের পর আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের পদক্ষেপের দিকে নজর রাখছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের বিচার নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

Link copied!

সর্বশেষ :