বাংলাদেশ শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আদালতে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা টানা ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন কাঠগড়ায়

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৪, ০৩:৩৩ পিএম

আদালতে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা টানা ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন কাঠগড়ায়

বিচারকার্য চলমান, কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ নেতারা। ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বেশ কয়েকজন হাইপ্রোফাইল নেতা এবং মন্ত্রী বুধবার (২০ নভেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির হন। সকাল ৯টায় বিচার কার্যক্রম শুরু হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, রাশেদ খান মেনন, শাজাহান খান, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, জুনাইদ আহমেদ পলক, উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এবং সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনিকে একে একে কাঠগড়ায় তোলা হয়।

আদালতের কাঠগড়ায় এই নেতারা টানা ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে কেউ ছিলেন বিমর্ষ, কেউবা আইনজীবীদের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করছিলেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের বিভিন্ন মামলার বিবরণ তুলে ধরে। 

আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের বিরুদ্ধে রূপনগর থানায় একটি হত্যা মামলায় রিমান্ড চাওয়া হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শামীম হাওলাদার নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যার জন্য জ্যাকবকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

অন্যদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে, গত ৫ আগস্ট উত্তরার জসীমউদ্দীন সড়কে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের সময় ফজলুল করিম নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেন তিনি। রাষ্ট্রপক্ষের দাবি, এই হত্যাগুলোর প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য তাদের রিমান্ডে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

তবে আসামিদের পক্ষ থেকে রিমান্ডের বিরোধিতা করা হয়। জ্যাকব আদালতে নিজেই কথা বলেন এবং দাবি করেন তিনি ঢাকায় কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক। তিনি ন্যায়বিচারের জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান।

অন্যদিকে আনিসুল হকের আইনজীবীও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তবে আদালত উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে জ্যাকবের তিন দিনের এবং আনিসুল হকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আনিসুলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫৫টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৭টি মামলায় তার ৪৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

শুনানি চলাকালে অন্য নেতাদেরও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মোহাম্মদপুর থানার একটি হত্যা মামলায় রাশেদ খান মেনন, শাজাহান খান এবং আনিসুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। একইভাবে পল্টন থানার একটি হত্যা মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

মিরপুর থানার আরেকটি হত্যা মামলায় প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত নেতারা একে অপরের সঙ্গে সংক্ষিপ্তভাবে কথা বলেন। বিশেষ করে সালমান এফ রহমান এবং দীপু মনির মধ্যে দুই থেকে তিন মিনিটের এক ছোট আলাপ আদালতের পরিবেশে কিছুটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।

বিচার কার্যক্রম শেষে নেতাদের কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তাদের মাথায় হেলমেট পরিয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এজলাস থেকে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতের হাজতখানায়। আদালত প্রাঙ্গণজুড়ে ছিল পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যদের উপস্থিতি, যা এই মামলাগুলোর গুরুত্ব এবং নিরাপত্তার গুরুত্বকে স্পষ্ট করে।

এ পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকসহ প্রায় ৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মোট ২৫৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে ৪৮টি, রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে ২২টি, জুনাইদ আহমেদের বিরুদ্ধে ৪৭টি এবং দীপু মনির বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রয়েছে।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই এসব মামলা নিয়ে আদালতে ব্যস্ততা বাড়ছে। গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের প্রতিদিন ভোরেই প্রিজন ভ্যানে করে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় এবং শুনানি শেষে আবার কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। আজকের শুনানিতেও সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে সাধারণ মানুষের ভিড় ও কৌতূহল ছিল লক্ষণীয়।

ক্ষমতাচ্যুত এই নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং রিমান্ডের এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। আগামী দিনে এসব মামলার বিচার কার্যক্রম এবং এর ফলাফল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হবে।

 

Link copied!

সর্বশেষ :