বাংলাদেশ সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

গোপন গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সাবেক আইজিপি বেনজীর

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫, ১০:০৯ পিএম

গোপন গভীর  ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সাবেক আইজিপি বেনজীর

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, যিনি সম্প্রতি একটি ভার্চুয়াল কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রমূলক মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। কনফারেন্সে বেনজীর আহমেদ, ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন, যা বাংলাদেশের পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের কাছে আসে। এ ঘটনায়, বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, তার এই কর্মকাণ্ড দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।

বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল হাসান তালুকদার এবং সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক ডাবলু স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ লিপিতে এই বিষয়টি উল্লিখিত হয়েছে। প্রতিবাদ লিপিতে উল্লেখ করা হয় যে, পুলিশের সদস্যরা গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে জনগণের সেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন। তারা একে অপরকে সুরক্ষা দিতে এবং দেশের উন্নতির জন্য কাজ করছেন, এবং এর ফলে জনবান্ধব একটি পুলিশ বাহিনী গঠিত হয়েছে। পুলিশ বাহিনী বর্তমানে কঠোরতার সাথে দেশপ্রেমের চেতনায় কাজ করছে এবং তারা অপরাধীদের বিচার চায়, বিশেষ করে সেইসব পুলিশ সদস্যদের বিচার যারা গুম, হত্যা বা অন্য কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

এদিকে, প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে, বেনজীর আহমেদ, যিনি গণহত্যা, দুর্নীতি এবং মানি লন্ডারিংসহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত, সেই ব্যক্তি বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে গভীর ষড়যন্ত্রমূলক মন্তব্য করেছেন এবং দেশ ও সরকারকে লক্ষ্য করে অশুভ পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব সম্পর্কে তার এই বক্তব্য বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং অত্যন্ত অপমানজনক বলে মনে হয়েছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলেও এটির তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন আরও বলেছে, ২০১৩ সালে হেফাজতের বিরুদ্ধে ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যা এবং দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত এক পলাতক সাবেক আইজিপির পক্ষে এমন ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড দেশ এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ, কেননা এমন একজন ব্যক্তি পুলিশের বিরুদ্ধে এই ধরনের মন্তব্য করেছেন, যে ব্যক্তি নিজে বহু বছর ধরে দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি ছিলেন।

এই ঘটনায় পুলিশের অনেক সদস্যও একমত হয়েছেন যে, বেনজীর আহমেদ যে ভার্চুয়াল কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন এবং সেখানে পুলিশ বাহিনী এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন, তা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এমন কর্মকাণ্ডে কোনোভাবে দেশের সম্মান এবং পুলিশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তারা মনে করেন যে, পুলিশের পেশাদারিত্ব এবং সততা নিয়েই তারা কাজ করে যাচ্ছেন এবং তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনে কোনো ধরণের গাফিলতি নেই।

এছাড়া, প্রতিবাদ লিপিতে আরও বলা হয়েছে, পুলিশ বাহিনী যেভাবে দেশের আইন এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য কঠোরভাবে কাজ করে, তেমনি তারা কোনো ধরনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হতে চাইবে না। এমন কোনো কাজ যা দেশের উন্নতি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, তা কখনোই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সমর্থন করবেন না। পুলিশ সদস্যরা সবসময় রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করবেন এবং কোনো রকমের ষড়যন্ত্রে নিজেদের যুক্ত করবেন না।

বিচারিক ব্যবস্থা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করতে নিরলসভাবে কাজ করে আসছেন। পুলিশ বাহিনী কখনোই রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না, তাদের কাজ জনগণের নিরাপত্তা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা। পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন এরকম ঘটনায় খুবই ক্ষুব্ধ এবং তারা বেনজীর আহমেদের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে, কারণ তার এসব কর্মকাণ্ড দেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাকে বিপদে ফেলতে পারে।

বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেম এবং পেশাদারিত্বের প্রতি বিশ্বস্ত। তারা কখনোই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের আদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সহানুভূতির পরিচায়ক হতে পারে না, কারণ তারা প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকে। তাদের মূল লক্ষ্য দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা করা।

Link copied!

সর্বশেষ :