বাংলাদেশ রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক আজ, বক্তব্য দেবেন ড. ইউনূস

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫, ১০:৪০ এএম

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক আজ, বক্তব্য দেবেন ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক আজ বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বক্তব্য রাখবেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের প্রধান লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে জাতীয় সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা এবং বিভিন্ন সংস্কারের জন্য সবার মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। প্রথম বৈঠকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেবে। তাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল কবির রিজভী, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

এদিকে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না গতকাল সন্ধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি বৈঠকে অংশ নিতে আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং তিনি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, "জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এই সংলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বৈঠকে অংশ নেব।"

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বৈঠক করা দলগুলোই আজকের বৈঠকে আমন্ত্রণ পেয়েছে। এ ধরনের সংলাপ ভবিষ্যতে ধারাবাহিকভাবে চলবে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি আলোচনা সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এই বৈঠকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, "জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের অগ্রগতির জন্য এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।" পরে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিশ্চিত করেন যে, তাঁদের প্রতিনিধিদলও আজকের বৈঠকে অংশ নেবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসফাইল । ছবি: বাসস
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসফাইল । ছবি: বাসস

বৈঠকের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, "সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার অংশ হিসেবেই আজকের বৈঠক শুরু হচ্ছে। আশা করছি, আমরা ইতিবাচক ফলাফল পাব।"

তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। প্রতিটি কমিশন তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজ করছে এবং ইতিমধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই প্রতিবেদনগুলো নিয়ে আজ থেকে সংলাপ শুরু হবে।”
গত বুধবার এই ছয়টি সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বে এই কমিশনকে সফলভাবে পরিচালনা করার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

বাকি পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রধানরাও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এদের মধ্যে শিক্ষা সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মুনিরা আহমেদ, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান ডা. ফারহানা হক, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের প্রধান মো. আবদুল কাদের, অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. মাহফুজুর রহমান এবং আইন ও বিচার সংস্কার কমিশনের প্রধান ব্যারিস্টার আনিসুল হক রয়েছেন।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম গত ১০ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, “ইতিমধ্যে ছয়টি সংস্কার কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই প্রতিবেদনগুলোর আলোকে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু হবে। আজকের বৈঠক সেই ধারাবাহিক সংলাপের প্রথম ধাপ।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মূল লক্ষ্য হলো জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংস্কারের মাধ্যমে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা। বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলোর মতামত ও সুপারিশ শোনার পাশাপাশি কমিশন তাদের পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজকের বৈঠকে প্রথমে কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য রাখবেন। এরপর প্রতিটি দলের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। বৈঠকের শেষ পর্যায়ে কমিশন একটি সমাপনী বক্তব্য দেবে এবং ভবিষ্যৎ সংলাপের রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে।

এ ধরনের বৈঠকের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যের একটি ভিত্তি স্থাপন করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আজকের বৈঠক সফল হলে ভবিষ্যতে আরও অনেক রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের পথ সুগম হবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উৎসাহ ও কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন করে সংলাপ ও ঐক্যের পরিবেশ তৈরি হতে পারে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এই উদ্যোগ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Link copied!

সর্বশেষ :