বাংলাদেশ রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১

বাংলাদেশে প্রথমবার রিওভাইরাস শনাক্ত: আইইডিসিআরের সফল গবেষণা

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৫, ১১:১০ এএম

বাংলাদেশে প্রথমবার রিওভাইরাস শনাক্ত: আইইডিসিআরের সফল গবেষণা

রিওভাইরাস

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পাঁচজনের শরীরে রিওভাইরাস শনাক্ত করেছে ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলোজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন শুক্রবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, আক্রান্তদের কারও শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি এবং চিকিৎসার পর সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে রিওভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

নমুনা পরীক্ষায় ভাইরাস শনাক্ত

অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, “খেজুরের কাঁচা রস পান করার পর প্রতিবছর নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এ ধরনের লক্ষণ দেখে সম্প্রতি ৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যদিও নিপা ভাইরাস শনাক্ত হয়নি, পাঁচজনের শরীরে রিওভাইরাস পাওয়া গেছে।”

এটি আইইডিসিআর এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির যৌথ গবেষণার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।

রিওভাইরাসের সাধারণ লক্ষণসমূহ:

বিশেষজ্ঞরা জানান, রিওভাইরাস সাধারণত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দেখা দিতে পারে:

 

  • হালকা জ্বর
  • শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (সর্দি, কাশি)
  • ডায়রিয়া বা পেটে অস্বস্তি
  • মাথাব্যথা
  • ক্লান্তি বা দুর্বলতা
  • শ্বাসকষ্ট
  • বমি বা ডায়রিয়া

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে শ্বাসতন্ত্র বা পরিপাকতন্ত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে। মারাত্মক সংক্রমণের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া বা মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনকেফালাইটিস) হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত, শিশু ও বয়স্করা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

 

প্রতিরোধের উপায়:

  • হাত ধোয়া: নিয়মিত এবং সঠিকভাবে হাত ধোয়া (বিশেষত খাবার খাওয়ার আগে এবং বাথরুম ব্যবহারের পর)।
  • ভালোভাবে রান্না করা খাবার খাওয়া: খাবার সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করা এবং পরিষ্কার পানীয় গ্রহণ করা।
  • ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা এবং ব্যবহৃত টিস্যু বা রুমাল সঠিকভাবে ফেলা।
  • ভ্যাকসিন: যদিও রিওভাইরাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন নেই, কিছু ক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নয়ন চলছে।

গবেষণার গুরুত্ব

অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন আরও বলেন, “দেশে প্রতি বছর অনেক এনকেফালাইটিস রোগী পাওয়া যায়, কিন্তু এর সঠিক কারণ চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। রিওভাইরাস শনাক্তের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিক উন্মোচন হতে পারে।”


 

রিওভাইরাসের ইতিহাস

রিওভাইরাস বিশ্বে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় ১৯৫০ সালে। শীতকাল এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সময়।


 

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শীত মৌসুমে ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে:

  • হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা
  • হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
  • শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া

উদ্বেগের কারণ নেই

আইইডিসিআর জানিয়েছে, রিওভাইরাস নিয়ে আপাতত উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আক্রান্তদের সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে নতুন রোগজীবাণু চিহ্নিত করার এই অগ্রগতি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য গবেষণার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।



 

Link copied!

সর্বশেষ :