বাংলাদেশ রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১

পারিবারিক কবরস্থানে ফায়ার ফাইটার নয়নের দাফন সম্পন্ন , ট্রাক ড্রাইভার বেলাল আটক

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪, ১১:০৭ এএম

পারিবারিক কবরস্থানে ফায়ার ফাইটার নয়নের দাফন সম্পন্ন , ট্রাক ড্রাইভার বেলাল আটক

ফায়ার ফাইটার নয়নের দাফন সম্পন্ন। ছবি: সংগৃহীত

সচিবালয়ের সামনে দায়িত্ব পালনকালে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী সোহানুর জামান নয়ন একটি দ্রুতগতির ট্রাকচাপায় নিহত হন। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ১টা ৫৪ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস সচিবালয়ে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। দায়িত্ব পালনকালে নয়ন পানির লাইন সংযোগ দিতে গিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তখনই বেপরোয়া গতির ট্রাকটি তাকে ধাক্কা দেয়।

দুর্ঘটনার পর চালক বেলাল হোসেন সুমন (৩৫) ও তার সহকারী ফরহাদ (২০) ট্রাক নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তবে উপস্থিত জনতা ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটক করে। শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর জানান, জনতার সহায়তায় চালক ও সহকারীকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

দায়িত্ব পালনকালে মৃত্যু

সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার খবর বুধবার রাত ১টা ৫২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসে পৌঁছায়। দুই মিনিটের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। শুরুতে আটটি ইউনিট কাজ করলেও পরে ১১টি ইউনিট যুক্ত হয়। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দায়িত্ব পালনকালে নয়ন পানির পাইপ কাঁধে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তখন ট্রাকটি দ্রুত গতিতে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। নয়ন পড়ে গেলে ট্রাকের পেছনের চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। সহকর্মীরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নয়নের কর্মজীবন ও পরিবার

ফায়ার ফাইটার সোহানুর জামান নয়ন ছিলেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার আটপুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০২২ সালে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন। তার কর্মস্থল ছিল সিলেটের বিশ্বনাথ ফায়ার স্টেশন, তবে সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে। ২৪ বছর বয়সী নয়ন ছিলেন তার পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার বাবা আক্তারুজ্জামান একজন কৃষক এবং মা নার্গিস গৃহিণী। নয়নের বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। পরিবারটি নদীভাঙনের শিকার হওয়ায় আর্থিক সংকটে ছিল। তার চাকরি পাওয়ার পর পরিবারে কিছুটা সচ্ছলতা ফিরলেও এই দুর্ঘটনায় তাদের সব আশা শেষ হয়ে যায়।

জানাজা ও দাফন

বৃহস্পতিবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে নয়নের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীসহ ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে নয়নের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে হাজারো গ্রামবাসী তাকে এক নজর দেখতে ভিড় করেন। গ্রামের মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

পরিবারের শোক ও স্থানীয়দের দাবি

নয়নের মৃত্যুতে তার পরিবার দিশাহারা। বাবা আক্তারুজ্জামান শোকাহত কণ্ঠে বলেন, "বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ অনেক ভারী। আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।" তার মা নার্গিস শোকে পাগলপ্রায়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম সরকার বলেন, "নয়নের পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র। এভাবে একজন মেধাবী যুবকের অকালে মৃত্যু অত্যন্ত কষ্টদায়ক। সরকারের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।"

উপসংহার

ফায়ার ফাইটার নয়নের মৃত্যু শুধু তার পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। দায়িত্ব পালনকালে এমন একটি দুর্ঘটনা আমাদের ট্রাফিক সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। নয়নের পরিবারের জন্য সরকারি সহায়তা এবং ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের দাবি এখন সময়ের দাবি।


 

Link copied!

সর্বশেষ :