বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। এর মধ্যে আছেন আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, যারা গত বুধবার (১ জানুয়ারি) রাতে ফেসবুকে খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি।
ফেসবুক আইডি বন্ধ হওয়ার খবর
বুধবার রাতে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সমস্যা দেখা দেয় এবং অনেকের আইডি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এই ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত রাফী, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাইদ আবদুল্লাহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির সভাপতি সাদিক কায়েম। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেজে দাবি করা হয়েছে এই আইডিগুলোর ডিজেবল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সাইবার আক্রমণ থেকে নিরাপত্তার জন্য অনেকেই তাদের আইডি ডি-অ্যাক্টিভেট করে রেখেছেন।
সাইবার হামলা ও হ্যাকার গ্রুপের দাবি
Crack Platoon-Bangladesh Cyberforce নামের একটি পেজ দাবি করেছে যে তারা বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং পেজ ডিজেবল করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রচারণায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ, খান তালাত মাহমুদ রাফি ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে সাইবার হামলা চালিয়েছে। পেজটির দাবি তারা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিদের আইডি ডিজেবল করে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এই ধরনের হামলা অব্যাহত রাখবে।
এছাড়াও Crack Platoon-Bangladesh Cyberforce তাদের পোস্টে একাধিকবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমর্থন করার কথা জানিয়েছে এবং দাবি করেছে তারা `রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ` প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে।
নিরাপত্তা কারণেই আইডি ডি-অ্যাক্টিভেট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ জানিয়েছেন সাইবার আক্রমণের কারণে তারা নিজ উদ্যোগে তাদের আইডি ডি-অ্যাক্টিভেট করেছেন। তারা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাইবার টিমের পক্ষ থেকে কিছু আইডি ডিজেবল করা হয়েছে, যার ফলে নিরাপত্তার কারণে কিছু আইডি আপাতত ডি-অ্যাক্টিভেট করা হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছেন স্ক্যামার গ্রুপের থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আইডিগুলো আবার অ্যাক্টিভেট করা হবে।
এ বিষয়ে সাইয়্যেদ আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, তিনি হঠাৎ করে একটি মেসেজ পেয়ে তাঁর আইডি সাসপেন্ড হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং পরে সেটি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেন। তবে পরে আবারও তার আইডি সাসপেন্ড হয়ে যায়। তিনি দাবি করেন এটি আওয়ামী লীগের সাইবার টিমের কাজ এবং বিভিন্ন পেজ থেকে তাদের টার্গেট করা হচ্ছে।
সাইবার হামলার হুমকি ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
এ বিষয়ে একাধিক পোস্টে জানানো হয়েছে যে, সাইবার হামলা বা আক্রমণের কারণে অন্যান্য নেতাদের আইডি ও পেজও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রায়হান আহমেদ তামীম, একজন গণমাধ্যম সদস্য, তার পোস্টে জানান কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা সতর্কতার জন্য অনেকেই তাদের আইডি ডি-অ্যাক্টিভেট করে রেখেছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন সব আইডি ফিরে আসবে এবং ইতিমধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ শুরু হয়েছে।
উপসংহার
বর্তমানে ফেসবুকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষের ক্ষেত্রে। ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হওয়ার ঘটনা সাধারণ ব্যবহারকারীর মধ্যেও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। তবে, এই পরিস্থিতিতে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সাইবার হামলা থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই তাদের আইডি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছেন। এখন সবার নজর থাকবে কীভাবে পরিস্থিতি সমাধান হয় এবং নেতারা তাদের আইডি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন কিনা।
আপনার মতামত লিখুন :