নিম্ন আয়ের মানুষের পুষ্টির অন্যতম প্রধান উৎস ডিম। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বাজার অস্থিরতায় বাদ যায় নি ডিমও। অত্যধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে এক এক ডজন ডিম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজন ডিমের দাম খুচরা বাজারে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে এখন ১৮০ টাকায় পৌঁছেছে। ক্রেতারা এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সরাসরি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে অভিযোগ তুলছেন। এছাড়াও গত ২০ দিনে অযৌক্তিকভাবে ডিম ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে অসাধু চক্র ২৮০ কোটি টাকা লুটপাট করেছ বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) অভিযোগ করছে, মূলত কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি ডিমের দাম বাড়ানোর পেছনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
ডিমের দামের বর্তমান অবস্থা
ঢাকা শহরের খুচরা ও পাইকারি বাজারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখন মুরগির ডিমের ডজন পাইকারিতে ১৬৮-১৭১ টাকা এবং খুচরায় ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি ডিম খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। হাঁসের ডিমের ক্ষেত্রেও দাম বেড়ে বর্তমানে ডজন প্রতি ২১০ টাকা হয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধি সরকারের নির্ধারিত ডিমের দাম এর থেকে অনেক বেশি। সেপ্টেম্বর মাসেও ডিমের ডজন ১৭০ টাকা ছিল, যা বর্তমান মাসে ১৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত এক বছরে ডিমের দাম প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নির্ধারিত ডিমের যৌক্তিক মূল্য ছিল প্রতি ডজন ১৪২ টাকা। কিন্তু বর্তমান বাজারে ডজনে প্রায় ৩৭ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
সিন্ডিকেটের ভয়াল থাবা
বিপিএ’র অভিযোগ অনুযায়ী, দেশের ডিম ও মুরগির দাম বাড়ানোর মূল কারণ সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রথমে খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করার পর ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় তা পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজের পর মূল্য নির্ধারণ করে এবং তা মোবাইল এসএমএস ও সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়। এতে করে এককভাবে সিন্ডিকেট ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এবং নিজেরা বেশি মুনাফা অর্জন করছে।
সিন্ডিকেটের কারণে শুধু মাত্র ভোক্তা নয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খামারিদেরও। উৎপাদকরা ডিমের যৌক্তিক দাম পাচ্ছেন না। কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর সাথে সমন্বয় না থাকায় তাদের পক্ষে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
খামারিদের ক্ষতি
দেশের খামারিরা দাবি করছেন প্রকৃতপক্ষে কোনো ডিমের সংকট নেই বরং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ডিমের দাম বাড়িয়ে জনগণকে বেশি মূল্যে ডিম কিনতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেছেন, মুরগির খাবার ও বাচ্চার দাম কয়েকবার বাড়ানোর কারনে পোল্ট্রি খাতের খরচ বেড়ে গেছে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করে আসছে যা খামারিদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করছে।
সমাধানের প্রস্তাব
বিপিএ ও অন্যান্য খামারিরা মনে করছেন, এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকে মুরগির খাদ্য ও বাচ্চার দাম নির্ধারণ করতে হবে এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে করে ডিমের উৎপাদন খরচ কমবে এবং বাজার স্থিতিশীল হবে।
বাজারের অস্থিরতা নিরসনে আরও কার্যকর তদারকির প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সঠিকভাবে ন্যায্য মূল্যে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে জনগণও উপকৃত হবে এবং বাজারের অস্থিতিশীলতা কমে আসবে।
বর্তমানে দেশের ডিমের বাজারে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা সমাধান করতে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সিন্ডিকেটের প্রভাব দূর করে জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য মূল্যে ডিম সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :