হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে নিত্যনতুন চাঞ্চল্যকর ঘটনা। তারই ধারাবাহিকতায় এবার বেরিয়ে এলো আরো এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। প্রায় একযুগ ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোপনে রাজনীতি পরিচালনা করে আসছে ইসলামী ছাত্র শিবির। প্রকাশ্যে এলেন ঢাবির ছাত্র শিবিরের সভাপতি আবু সাদিক কায়েম।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) হঠাৎ নিজের ফেসবুক আইডিতে এক বার্তায় নিজের পরিচয় প্রকাশ করে লেখেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধের আলোচনা চলছিলো। আলোচনা বেগবান করতে গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাবি ক্যাম্পাসে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ১০টি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানেও সাদিক কায়েমকে দেখা যায় ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিনিধি হিসেবে। বৈঠকে তিনি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ না করে এর ব্যাপক সংস্কারের দাবি জানান।
সাদিক খাগড়াছড়ি থেকে দাখিল এবং চট্টগ্রাম থেকে আলিম পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের ছাত্র ছিলেন। সাদিকের ছোট ভাইও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত।
সাদিকের পরিচয় নিয়ে গোপনীয়তা শেষ হতে না হতেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলামও ফেইজবুকে স্বীকার করেন সাদিক ছাত্র শিবিরের সভাপতি, এমনকি দুয়েকদিনের মধ্যে সেক্রেটারিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় ছাত্র শিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের তালিকায় সাদিকের নাম না থাকলেও বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে ছিলেন সাদিক কায়েম, তাকে দেখা গেছে সমন্বয়কদের সঙ্গে বিভিন্ন ছবিতেও। এমনকি উপদেষ্টা পরিষদের শপথ অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনেও উপস্থিত ছিলেন।
সাদিক কায়েমের স্বীকারোক্তিতে তোলপাড় ফেইজবুক। বিষয়টি তারা এতটাই গোপনীয় করে রেখেছিল যে সাদিকের খোদ রুমমেটও কোনোদিন টের পাননি তিনি ছাত্রশিবির কর্মী তথা সভাপতি।
তিনি ফ্যাবাদ এবং ফ্যাসিবাদী সরকার নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট করেন। আরও বলেন আওয়ামী ফ্যাসিবাদ গত ষোল বছর ধরে রাজনীতির প্রতি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি করেছিলো যা চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ধ্বংস হয়েছে। রাজনীতি সম্পর্কে তৈরি হয়েছে নতুন সচেতনতা এবং দেয়ালে দেয়ালে লেখা হচ্ছে, ‘এখানে রাজনৈতিক আলাপ জরুরি।’
সাদিক কায়েম আরও লেখেন, গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্নমতের প্রতি থাকবে সম্মান, কিন্তু কেউ যেন স্বৈরাচারী না হয়ে উঠতে পারে সে ব্যাপারে রাখতে হবে সজাগ ও পূর্ণ দৃষ্টি। তবে রাজনৈতিক সংস্কারে অবশ্যই চব্বিশের শহীদদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে, তা না হলে ভেস্তে যাবে আমাদের এই স্বাধীনতা।
সাদিক কায়েমের পরিচয় প্রকাশের পর অবাক হয়েছেন অনেকেই। তার মধ্যে ছিলো তার বাল্যবন্ধু এমনকি পূর্বপরিচিতরাও। তবে এ বিষয়টি মানবাধিকারকর্মী ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য বেশ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। ঢাবিতে প্রকাশ্যে শিবিরের রাজনীতিকে অন্য ধারায় নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ঠেকানো যাবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে এত বছরের গোপন সংগঠন দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় কতটা অবদান রাখতে পারবে কিংবা দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ ধরা দেবে তা সময়ই বলে দেবে।
আপনার মতামত লিখুন :