কক্সবাজার এর উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন দুইজন এবং শত শত বসতঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর ২০২৪) দুপুরে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে, যা প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
অগ্নিকাণ্ডের বিবরণ
স্থানীয় সময় দুপুর পৌনে ১টার দিকে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লম্বাশিয়া ১-ওয়েস্ট অংশের ডি-ব্লকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অল্প সময়ের মধ্যেই আগুন আশপাশের বসতঘর এবং অন্যান্য স্থাপনায় ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের ভয়াবহতায় এক হাজারেরও বেশি ঘর পুড়ে গেছে।
নিহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন ৬০ বছর বয়সী আবুল খায়ের, যিনি ক্যাম্প-১ সি ব্লকের বাসিন্দা। তিনি মৃত সুলেমানের ছেলে। এছাড়া, এক অজ্ঞাত শিশুও প্রাণ হারিয়েছে। নিহত আবুল খায়েরের ভাতিজা মো. মুজিবুল্লাহ বলেন, "কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তা জানি না। যখন আগুন দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ছিল, তখন আমার চাচা ঘর থেকে বের হতে পারেননি। ঘরে থাকা সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।" ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাঁচ শতাধিক বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। তবে সঠিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে তদন্ত চলছে।
ফায়ার সার্ভিসের অভিযান
উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন মাস্টার শরিফুল ইসলাম জানান, "আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রথমে তিনটি ইউনিট কাজ করে। পরে কক্সবাজার ও টেকনাফ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে আরও পাঁচটি ইউনিট যুক্ত হয়।" ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেন। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টার পর বিকেল পৌনে ৩টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুনের কারণ ও তদন্ত
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের উপ-পরিচালক মো. তানহারুল ইসলাম বলেন, "আগুন কীভাবে লেগেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ঘটনাস্থলে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ পরিমাণ এবং আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।"
ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্দশা
অগ্নিকাণ্ডে ঘরবাড়ি হারিয়ে হাজারো মানুষ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্তরা খাদ্য, পানি এবং আশ্রয়ের জন্য মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা
অগ্নিকাণ্ডের পরই সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা এবং অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উপসংহার
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কেবল বসতঘর পুড়িয়ে দেয়নি, হাজারো মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। আগুন লাগার প্রকৃত কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে তদন্ত চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
আপনার মতামত লিখুন :