২৭ ডিসেম্বর, শুক্রবার সকালে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় জন প্রাণ হারিয়েছেন। ব্যাপারী পরিবহনের একটি দ্রুতগামী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, ও মাইক্রোবাসসহ অপেক্ষমাণ যানবাহনে আঘাত করে। ঘটনাস্থলে পাঁচ জন নিহত হন, পরে হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
চালক গ্রেপ্তার ও তদন্ত
দুর্ঘটনার পর বাসের চালক মোহাম্মদ নুরুদ্দিন বাস ফেলে পালিয়ে যান। তবে র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চালক জানান, বাসের ব্রেক কাজ না করায় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারান। তদন্তে উঠে আসে, তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ২০২২ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হয় এবং এটি নবায়ন করা হয়নি।
র্যাব-১০ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস কর্মকার জানান, বাসটি অত্যন্ত উচ্চগতিতে চালানো হচ্ছিল, যা টোল প্লাজার ব্যারিয়ার ভেঙে সামনে থাকা যানবাহনগুলোতে আঘাত করে। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং দুর্ঘটনাকবলিত যান সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
হাসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, “চালকের অবহেলা ও যানবাহনের ত্রুটির কারণে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। চালকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে, এবং তদন্ত শেষে বাস মালিকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নিহত ও আহতদের পরিচয়
নিহত ছয় জনের মধ্যে রয়েছেন রাজধানী জুরাইনের বাসিন্দা আমেনা হক (৪৫), তার মেয়ে ইমি (২৭), রিয়া (১২), এবং দুই বছরের নাতি আয়াত। মোটরসাইকেলের আরোহী সাত বছরের শিশু আব্দুল্লাহ ঘটনাস্থলে মারা যায়। রেশমা আক্তার নামের আরেকজন আহত অবস্থায় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। দুর্ঘটনায় মোট ১৫ জন আহত হন, যাদের মধ্যে গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঘটনার বিবরণ
ঘটনার সময় টোল প্লাজার সামনে একাধিক যানবাহন অপেক্ষমাণ ছিল। দ্রুতগতির বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেটকার এবং মোটরসাইকেলে সজোরে আঘাত করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসটি অস্বাভাবিক গতিতে ছিল এবং প্রাইভেটকারটি দুর্ঘটনায় সম্পূর্ণ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজেও দুর্ঘটনার দৃশ্য স্পষ্ট হয়েছে।
পরিবারগুলোর শোক
এই দুর্ঘটনায় শোকাহত পরিবারগুলো অসহনীয় বেদনার মধ্যে রয়েছে। আমেনা হক তার দুই মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে আত্মীয়ের কুলখানিতে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় তাদের সবাই প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যদিকে, রেশমা আক্তার তার স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। ছেলেটি ঘটনাস্থলেই মারা যায়, পরে রেশমাও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
এক্সপ্রেসওয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে গত এক সপ্তাহে আটটি দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনা এক্সপ্রেসওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি ও যানবাহন চালকদের অদক্ষতার দিকে ইঙ্গিত করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, চালকদের অদক্ষতা, এবং নিয়মিত লাইসেন্স নবায়নের অভাব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। টোল প্লাজাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গতির নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।
উপসংহার
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা শুধু চালকের অদক্ষতা ও যানবাহনের ত্রুটির কারণে ঘটেনি। সড়ক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়ন, চালকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, এবং জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি। একই সঙ্গে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে চালকদের নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :