রাজধানীর উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর রোডে এক দম্পতির ওপর কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে আটটায় মকবুল ও ইফতি নামে ওই দম্পতিকে রামদা দিয়ে আক্রমণ করতে থাকে দুজন যুবক। স্বামীর ওপর বর্বর হামলা থেকে রক্ষা করতে নিজের জীবন বাজি রেখে ঢাল হয়ে দাঁড়ান স্ত্রী ইফতি। তার সাহসিকতার এই ঘটনা নেটিজেনদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মকবুল ও ইফতি হঠাৎ করেই হামলার শিকার হন। দুর্বৃত্তরা প্রথমে মকবুলকে আক্রমণ করলেও পরে ইফতি বাধা দিতে গেলে তাকেও আঘাত করতে উদ্যত হয়। কিন্তু ইফতি বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে স্বামীকে রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালান।
অভিযুক্ত হামলাকারীরা হলেন মোবারক হোসেন (২৫) ও রবি রায় (২২)। উভয়েই টঙ্গী এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য এবং এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত। ঘটনার পর স্থানীয় জনতা দুই দুর্বৃত্তকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। পরে তাদের উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল সদস্য হাসান মঈন জানান, ঘটনার সময় কিশোর গ্যাং সদস্যরা উত্তরা সেক্টরে উচ্চশব্দে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছিল। এতে মকবুল ও ইফতি প্রতিবাদ করলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পরবর্তীতে ২০-২৫ জনের একটি গ্যাং বাহিনী জড়ো করে তারা মকবুল ও ইফতির ওপর হামলা চালায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সাধারণত সন্ধ্যার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আশপাশের এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধে লিপ্ত থাকে। তাদের কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে অতিষ্ঠ।
হামলার সময় স্থানীয়রা এগিয়ে এসে অভিযুক্তদের ধাওয়া দিলে বেশিরভাগ সদস্য পালিয়ে যায়। তবে দুজনকে আটক করতে সক্ষম হন স্থানীয়রা। তাদের গণপিটুনি দেওয়ার পর সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছে, কিশোর গ্যাংয়ের অন্যান্য সদস্যদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইফতির সাহসিকতার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। ধারালো অস্ত্রের মুখেও নিজের স্বামীকে রক্ষা করার জন্য যেভাবে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাতে নেটিজেনরা তার সাহসকে অভূতপূর্ব বলে প্রশংসা করেছেন। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ইফতি বর্তমান সময়ের সাহসী নারীর প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

হাসান মঈন আরও বলেন, মকবুল জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তাহসিন রিয়াদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও কিশোর গ্যাংয়ের মূল হোতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানিয়েছেন, আটককৃত মোবারক ও রবি রায়ের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আশ্বস্ত করেন যে, উত্তরা ও আশপাশের এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কঠোর হাতে দমন করা হবে।
এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। তারা পুলিশের তৎপরতার প্রশংসা করলেও এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে বিষয়ে বিশেষ নজরদারির দাবি জানান।
ঘটনার পর থেকে উত্তরা এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই নিজেদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বেশি তৎপর হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :