বাংলাদেশ সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

ভারতকে আর ছাড় দেবে না বিজিবি যে কারণে

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম

ভারতকে আর ছাড় দেবে না বিজিবি যে কারণে

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ যেসব বিষয়ে বঞ্চিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। বিশেষ করে সীমান্ত হত্যা ও অসম চুক্তির বিষয়গুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিজিবি ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে কড়া অবস্থান

সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি প্রধান জানান, এবারের আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হবে সীমান্ত হত্যা। তিনি বলেন, "বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে হত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু এখনো সমস্যার সমাধান হয়নি। আমাদের নাগরিকদের হত্যা বন্ধের বিষয়ে কোনো আপস করা হবে না। আমরা বিএসএফের কাছে এ বিষয়ে কঠোর বার্তা দেবো।"

তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নাগরিকদের হত্যা বন্ধে বারবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও বাস্তবে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। আমরা চাই, বিএসএফ তাদের কার্যক্রম পরিচালনার সময় মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলবে।"

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, "আমরা চাই, সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ুক। বিএসএফের উচিত অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান ঠেকাতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, কিন্তু বিনা কারণে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।"

অসম চুক্তিগুলো পর্যালোচনার তাগিদ

মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, "পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছি, ভারতের সঙ্গে হওয়া অসম চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করে কূটনৈতিকভাবে সমাধান করতে। আমাদের জাতীয় স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য।"

তিনি জানান, সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান কিছু চুক্তি বাংলাদেশের জন্য প্রতিকূল। এসব চুক্তির মাধ্যমে অনেক সময় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে এবং স্বার্থহানি ঘটছে।

"বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে উন্নয়নকাজ চালানোর ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আলোচনায় এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে উপস্থাপন করা হবে," বলেন তিনি।

সীমান্তে চোরাচালান ও মানবপাচার রোধে উদ্যোগ

বিজিবি প্রধান বলেন, "সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান ও মানবপাচার রোধে দুই দেশের মধ্যে আরও কার্যকর সমন্বয় দরকার। আমরা চাই, বিএসএফ ও বিজিবি যৌথভাবে কাজ করে এসব অপরাধ বন্ধ করুক।"

তিনি জানান, সীমান্ত এলাকায় অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে। "আমরা চাই, বাংলাদেশ ও ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করুক, যাতে দুষ্কৃতিকারীরা কোনোভাবেই সুযোগ নিতে না পারে।"

তিনি আরও বলেন, "আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সবসময় আইনানুগভাবে কাজ করছে। আমরা চাই, বিএসএফও একইভাবে নিয়ম মেনে কাজ করুক এবং অযথা কোনো বাংলাদেশিকে হয়রানি না করুক।"

বাংলাদেশের জলসীমা ও নদী ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, "সীমান্ত সমস্যার পাশাপাশি বাংলাদেশের জলসীমা ও নদী ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা হবে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নদীগুলোতে পানির প্রবাহ বজায় রাখতে চায়, যাতে আমাদের কৃষি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।"

তিনি বলেন, "বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখেছি, সীমান্তবর্তী নদীগুলোতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমরা চাই, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার চুক্তিগুলো মেনে নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা হোক।"

সীমান্ত সম্মেলনের গুরুত্ব

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, "বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত সম্পর্ক বিদ্যমান। এই সম্পর্ক আরও মজবুত করতে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানো জরুরি। সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য উভয় দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে আরও সমন্বয় দরকার।"

তিনি বলেন, "এই সম্মেলন দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। আমরা আশাবাদী, এবার বাস্তবসম্মত কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।"

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=eHW5PDJt-7Y

Link copied!

সর্বশেষ :