বাংলাদেশ সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

জানুয়ারিতে ১৬২ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫, ০৬:৩৩ পিএম

জানুয়ারিতে ১৬২ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ করেছে বিজিবি

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানুয়ারি মাসে সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৬২ কোটি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম রবিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ অভিযানে সোনা, রুপা, ডায়মন্ড, তৈরি পোশাক, বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, অবৈধ অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৬৩ জন চোরাচালানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৩০৮ জন বাংলাদেশি ও ১৮ জন ভারতীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে।

বিজিবি সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে বিভিন্ন আধুনিক কৌশল গ্রহণ করেছে। চোরাচালান প্রতিরোধে তারা ডিজিটাল নজরদারি ব্যবস্থা, ড্রোন ক্যামেরা, সিসিটিভি মনিটরিং, স্পিডবোট টহল এবং কুকুর স্কোয়াড ব্যবহার করছে। ইন্টেলিজেন্স-ভিত্তিক অভিযান: বিজিবি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চোরাচালান চক্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে এবং পূর্বপরিকল্পিত অভিযান পরিচালনা করে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি: চোরাচালানে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত রাখতে বিজিবি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। নাইট ভিশন ক্যামেরা ও ড্রোন ব্যবহার: রাতের বেলা সীমান্তে মাদক ও অবৈধ অস্ত্র পাচার রোধে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
 জল ও স্থলপথে টহল: পদ্মা, যমুনা ও অন্যান্য নদীপথে বিশেষ জলযান ও স্পিডবোটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

চোরাচালান প্রতিটি দেশের জন্যই একটি বড় সমস্যা। এটি শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।অর্থনৈতিক ক্ষতি:চোরাচালানের মাধ্যমে বৈধ বাণিজ্যের সুযোগ কমে যায়, ফলে সরকারের রাজস্ব আয় হ্রাস পায়।অবৈধভাবে আমদানি হওয়া পণ্য দেশীয় শিল্পকে প্রতিযোগিতার বাইরে ঠেলে দেয়।সামাজিক ক্ষতি:চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতরা সমাজে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে।যুবসমাজ মাদক পাচারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ছে।সীমান্ত নিরাপত্তা সংকট:মাদক পাচার ও অবৈধ অস্ত্র চলাচলের কারণে সীমান্ত এলাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।

চোরাচালান দমনে বিজিবি কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে এবং আদালতে অভিযোগ দাখিল করা হচ্ছে।বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন: সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।বর্ডার সিকিউরিটি এক্ট প্রয়োগ: বিজিবির অভিযানে ধরা পড়া অপরাধীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বর্ডার সিকিউরিটি এক্ট, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমন্বয়: ভারত, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে চোরাচালান প্রতিরোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিজিবির অভিযানের ফলে দেশের সীমান্ত অঞ্চলে চোরাচালানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে চোরাচালান সম্পূর্ণ নির্মূল করতে হলে স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন। বিজিবি তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আরও আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন, জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে সীমান্ত অপরাধ দমন করতে চায়।

সরকারের কঠোর নীতিমালা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তায় বাংলাদেশ চোরাচালানমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী।

Link copied!

সর্বশেষ :