শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের ২৪ যুবক ইতালিতে পাড়ি জমানোর উদ্দেশ্যে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ। দালাল চক্রের প্রতারণার শিকার স্বজনরা শরীয়তপুর আদালত চত্বরে অনশনে বসেছেন।
দালালদের প্রলোভনে পড়ে এক বছরে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের ২৪ তরুণ ইতালির পথে নিখোঁজ হয়েছেন। তাঁদের লিবিয়া হয়ে ইউরোপ পাঠানোর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ মেলেনি। স্বজনদের দাবি, দালাল চক্রটি প্রতিজনের কাছ থেকে ১২ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
দালাল গ্রেপ্তার, স্বজনদের কান্না-অনশন
শনিবার, শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা দোষীদের শাস্তি ও প্রিয়জনদের সন্ধান দাবিতে অনশন করেন। কয়েকজন স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন, কেউ আবার মাটিতে গড়াগড়ি করে আহাজারি করেন।
ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ সাইফুলের বাবা ফারুক পেদার করা মামলায় দালাল চক্রের সদস্য রাশেদ খান গ্রেপ্তার হয়েছেন। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
প্রতারণার ফাঁদ: কীভাবে নিখোঁজ হলেন তারা?
- দালাল চক্র শরীয়তপুর ও মাদারীপুর থেকে যুবকদের ইতালি পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়।
- প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, পরে মিসর হয়ে লিবিয়া পাঠানো হয়।
- এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
- কয়েকজনকে লিবিয়ায় আটক করে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন করা হয়।
স্বজনদের আকুতি: প্রিয়জনদের ফিরিয়ে দিন!
ফাতেমা আক্তার তার তিন বছর বয়সী সন্তানকে কোলে নিয়ে অনশনে বসেন। তার স্বামী শাহীন সিকদার নিখোঁজ। তিনি বলেন,
"আমার স্বামী বলেছিলেন, সমুদ্রপথে লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানো হবে। ২২ মার্চ ছিল তাঁর শেষ ফোনকল। এখন তাঁকে খুঁজে পাচ্ছি না। ঋণের চাপে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।"
রিয়াজ আকন, যার ছোট ভাই দিদার হোসেন নিখোঁজ, তিনি বলেন,
"পরিবারের অভাব ঘোচাতে সব বিক্রি করে ভাইকে ইতালি পাঠানোর চেষ্টা করি। দালালকে ২০ লাখ টাকা দিয়েছি, কিন্তু ভাই নিখোঁজ! আমরা তার সন্ধান চাই, দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই!"
মামলা ও তদন্তের অগ্রগতি
- শরীয়তপুরে ১১টি মামলা হয়েছে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে।
- পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অভিযানে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করেছে।
- পুলিশ রিমান্ড আবেদন করেছে, তবে আসামিপক্ষ জামিন চেয়েছে। আদালত সোমবার শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :