ঢাকার বায়ুদূষণ পরিস্থিতি দিন দিন উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২২টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আইকিউ এয়ারের মানসূচকে ঢাকার গড় বায়ুর মান ১৮৭, যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগের দিন এই মান ছিল ২৬৭, যা ঢাকাকে দ্বিতীয় স্থানে রেখেছিল।
বায়ুদূষণের তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তৈরি মানসূচক (AQI) নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, তা মানুষকে জানায় এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণের পরামর্শ দেয়।
ঢাকার দূষণের প্রধান উৎস হলো যানবাহনের ধোঁয়া, কলকারখানার নির্গমন এবং নির্মাণ কাজের ধুলাবালি। আজ ছুটির দিনে যানবাহন ও কলকারখানার সংখ্যা কম থাকলেও, দূষণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় রয়ে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মধ্যে সবচেয়ে দূষিত এলাকার তালিকায় রয়েছে গোড়ান (৩২৩), সাভারের হেমায়েতপুর (২১৮) এবং ঢাকার মার্কিন দূতাবাস সংলগ্ন এলাকা (২০৫)।
শুধু ঢাকা নয়, দেশের অন্যান্য প্রধান শহরগুলোর বাতাসের মানও ভালো নেই। চট্টগ্রামে বায়ুর মান ১২৭, রাজশাহীতে ১৯৮, খুলনায় ১৪৩—যা সবই অনিরাপদ স্তরের মধ্যে পড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো এলাকার বায়ুর মান যদি তিন দিন ৩০০-এর ওপরে থাকে, তবে সেই এলাকায় ‘স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা উচিত। ঢাকায় এই মাসে একাধিক দিন বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি ছিল, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
এ অবস্থায় আইকিউ এয়ার ঢাকাবাসীর জন্য সতর্কতামূলক কিছু পরামর্শ দিয়েছে:
- বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।
- খোলা জায়গায় ব্যায়াম বা দৌড়ানো এড়িয়ে চলতে হবে।
- ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হবে, যাতে বাইরের দূষিত বাতাস প্রবেশ না করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫-এর মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্ধারিত সীমার চেয়ে প্রায় ২১ গুণ বেশি। এটি শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, ফুসফুসের রোগ এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
গত ডিসেম্বরে রাজধানীতে একটি দিনও নির্মল বায়ু পাওয়া যায়নি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের জরিপ অনুযায়ী, গত ৯ বছরের মধ্যে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর ছিল সবচেয়ে দূষিত মাস।
এমন পরিস্থিতিতে নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদরা দূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, কেবল তাত্ত্বিক আলোচনা নয়, বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে:
- নির্মাণকাজের ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণ করা।
- যানবাহনের ধোঁয়া নির্গমন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
- কলকারখানার বর্জ্য নির্গমনের ওপর কড়া নজরদারি রাখা।
- সবুজায়ন ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাড়ানো।
বিশ্বের অন্যান্য মেগাসিটিগুলো বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফল হয়েছে। বাংলাদেশেও একই পথ অনুসরণ করা জরুরি। নয়তো ভবিষ্যতে ঢাকার বায়ু আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে।
আপনার মতামত লিখুন :