সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ রক্ষায় বেশ কয়েকটি নতুন বিধিনিষেধ আগামী পর্যটন মৌসুম শুরুর আগেই কার্যকর করা হবে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, নভেম্বরের আগেই এই নতুন নিয়মগুলো বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গত সোমবার (৭ অক্টোবর ২০২৪) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের নিষেধাজ্ঞা
প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা সেন্টমার্টিন দ্বীপে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক (একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার কাজ শুরু হবে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও জানান, এই সিদ্ধান্ত শুধু সেন্টমার্টিনেই নয়, কক্সবাজার এবং কুয়াকাটার পর্যটন এলাকাতেও প্রয়োগ করা হবে। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে সমুদ্রের কাছিমসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই এই পদক্ষেপকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
পর্যটক সংখ্যা ও রাত্রিযাপন নিয়ন্ত্রণ
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণে আরও বেশ কিছু নিয়ম করা হবে। যদিও ২০২০ সালে একদিনে সর্বাধিক ১,২৫০ জন পর্যটককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ২০২৩ সালে তা কমিয়ে ৮৮২ জন নির্ধারণ করা হয়। তবে তা বাস্তবায়িত না হলেও এবার এটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে জানিয়েছেন এই উপদেষ্টা। একইসঙ্গে, পর্যটকদের রাতে দ্বীপে অবস্থান করার অনুমতিও দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে ২০১৮ সাল থেকে দফায় দফায় সিদ্ধান্ত নিলেও এর বাস্তবায়ন এখনো সঠিকভাবে হয়নি।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ
পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থাপনা
দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার পর্যটন ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে চাইছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটকদের রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা চালু হবে এবং পর্যটক সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হবে যাতে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন বন্ধ করা যায়। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দ্বীপটি খুবই ছোট এবং এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এতে অনেক বিপন্ন প্রাণী যেমন কাছিম, পাখি এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর বসবাস রয়েছে। তাই অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন দ্বীপের পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
পর্যটন মৌসুমে বিধিনিষেধ
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, আসন্ন পর্যটন মৌসুমে এই বিধিনিষেধ কার্যকর করা হবে। নভেম্বর ও ডিসেম্বর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার আগে হোটেল মালিক, ট্যুর অপারেটর, এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। সেন্টমার্টিনকে একটি কোলাহলমুক্ত দ্বীপ হিসেবে রক্ষা করার জন্য এই পদক্ষেপগুলো জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
টেকসই উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সেন্টমার্টিন রক্ষা
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপটি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। দ্বীপে পর্যটকদের অত্যধিক চাপ পরিবেশের ক্ষতি করছে। তিনি উল্লেখ করেন, যদি দ্বীপটিকে সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো সবাই একসাথে শেষ করে দেই, তাহলে ভবিষ্যতে এই জায়গা পর্যটকদের জন্য আর উপযোগী থাকবে না।
সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা
নতুন বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের জন্য একটি টাইমফ্রেম নির্ধারণ করা হবে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ ধ্বংস করে পর্যটন উন্নয়ন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সেন্টমার্টিনসহ দেশের প্রধান পর্যটন এলাকাগুলোর পরিবেশবান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :