একটা সাজানো গোছানো বারান্দায় বসে এক কাপ চা কিংবা কফিতে চুমুক দিতে দারুণ লাগে, তাই না? জ্বি, আর সেই বারান্দাটা যদি হয় সবুজে ঘেরা তবে তা যেন এক মুক্ত বাতাসের আধার। শহরের ইট পাথরের ব্যস্ততম জীবনে এই এক চিলতে বারান্দা যেন এক টুকরো স্বর্গ। একটা সাজানো গোছানো বারান্দা শুধু মাত্র একটা ঘরের অংশই নয় বরং এর সাথে জড়িয়ে থাকে আমাদের আবেগ, ভালো-মন্দ অনুভূতির অনেক স্মৃতি। তাই বাড়ি হোক বা ফ্ল্যাট বারান্দাকে সুন্দর করে সাজানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে বেশিরভাগ মানুষই ভাবে হয়তো বারান্দা সাজাতে অনেক খরচ হয়। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ইচ্ছে থাকলে কিছু সহজ ও সাশ্রয়ী আইডিয়া কাজে লাগিয়ে নাম মাত্র খরচেই আপনার বারান্দাকে মনের মতো করে সাজাতে পারেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে করবেন।
১. ছোট ছোট টব ও বাহারী ফুলের গাছ
বারান্দা সাজানোর সবচেয়ে সহজ ও সুন্দর উপায় হলো গাছ লাগানো। বারান্দায় ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের টবে বাহারি ফুল গাছ লাগাতে পারেন। এমনকি গ্রিলেও ছোট টব ঝুলিয়ে দিতে পারেন। এতে যেমন জায়গার সাশ্রয় হবে তেমনি পুরো বারান্দায় সবুজের ছোঁয়া আসবে। দেখার সৌন্দর্যের জন্য বড় টবগুলো বারান্দার কোণায় রাখতে পারেন। বর্তমানে প্লাস্টিকের টব বেশ জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য। তবে বারান্দায় গাছ লাগানোর একটা বড় শর্ত হচ্ছে গাছ সতেজ রাখতে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে।
২. বারান্দার মেঝেতে কার্পেট বিছানো
কেউ যদি গাছ ছাড়াও বারান্দায় বসার জন্য স্পেশাল কর্নার করতে চান তবে মেঝেতে কার্পেট বিছিয়ে নিতে পারেন। এতে যেমন আপনার আয়েশের সুযোগ হবে তেমনি বারান্দাটা দেখতেও ক্লাসি লাগবে। তবে এক্ষেত্রে বারান্দার আয়তন বুঝে বসার জায়গা ঠিক করে নিতে হবে। মাটির টব বা অন্য কোনো পাত্রে কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট রাখলে আরও ভালো লাগবে।
৩. বাঁশ বা বেতের মোড়া বা কাঠের চেয়ার
যদি আপনার বাড়ি পুরোনো ধাঁচের হয় বা একটু ট্রেডিশনাল লুক দিতে চান তাহলে বেত বা বাঁশের তৈরি মোড়া রাখুন। এই মোড়াগুলো দেখতে যেমন দারুণ তেমনি বসার জন্যও বেশ আরামদায়ক। এছাড়া দামেও সাশ্রয়ী। বৃষ্টির দিনে এমন একটা পরবেশে বারান্দায় বসে এক কাপ চায়ের সাথে মুহুর্তটাই জমে যাবে। তবে বারান্দায় আসবাব রাখলে মনে রাখবেন বৃষ্টিতে সেগুলো ভিজতে পারে। তাই প্লাস্টিকের আসবাব রাখলে ভালো হয়। কিন্তু প্লাস্টিকের চেয়ে বেত বা কাঠের আসবাবের আভিজাত্য একটু অন্যরকম।
৪. সবুজের ছোঁয়া পেতে গাছের পরিচর্যা
শহরের যান্ত্রিক জীবনে অনেকেই বারান্দার এক টুকরো সবুজের মধ্যে শান্তি খুঁজে পান। অফিস থেকে ফিরে গাছের যত্ন নেওয়া কিংবা গাছের দিকে তাকিয়ে থাকাটাও যেন মানসিক প্রশান্তি দেয়। লতানো গাছ বা ইনডোর প্ল্যান্ট বারান্দার জন্য একদম পারফেক্ট। এগুলোর যত্নও তেমন লাগে না। কেবল মাটি শুকিয়ে গেলে নিয়মিত পানি দিতে হবে, পাতায় ধুলো জমলে পানি স্প্রে করতে হবে, আর মাঝে মাঝে সার দিতে হবে।
৫. পোষা পাখি রাখুন
বারান্দার পরিবেশে প্রাকৃতিক ছোঁয়া আরো বাড়াতে খাঁচায় এক জোড়া পোষাপাখি রাখতে পারেন। পাখির কলতান বারান্দাকে আরও বেশি প্রাণবন্ত করে তোলে। এমনকি বাসায় মেহমান এলেও ঘরের চেয়ে এই সাজানো গোছানো বারান্দায় বসতেই বেশি পছন্দ করবেন।
৬. গাছ কেনার টিপস ও বিশ্বস্ত সেলার খুঁজে পাওয়া
অনেকেই এখন অনলাইন বা নার্সারি থেকে গাছ কেনেন। তবে ভালো গাছ পাওয়া একটু ঝামেলার হতে পারে। অনলাইনে কিছু বিশ্বস্ত সেলার আছেন যারা গাছের কোয়ালিটি নিয়ে আপোষ করেন না। গাছ নষ্ট হলে তারা কুরিয়ারে তা পাল্টেও দেন এবং পরবর্তী যত্ন সম্পর্কে পরামর্শও দেন। তাই যাচাই বাছাই করে গাছ কিনুন।
৭. গাছ কেনার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন
গাছ কিনে এনে সোজা বারান্দায় রেখে দেবেন না। নতুন গাছটি অন্তত সাত দিন আলাদা জায়গায় রাখুন যাতে তা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে পারেন যা গাছকে সুস্থ রাখতে সহায়ক হবে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় বারান্দা সাজানো মানে নিজের মনের মতো করে একটি মুক্ত পরিসর তৈরি করা, যেখানে বসে কেবল প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো যাবে। একটু যত্নশীল হলে এই বারান্দা হতে পারে আপনার প্রশান্তির ঠিকানা যা সারা দিনের ক্লান্তি মুছে আপনাকে আনন্দ ও শান্তি দেবে।
আপনার মতামত লিখুন :