সহকারী পরিচালক পদে চাকরি পাওয়ার জন্য লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাওয়া মোট নম্বরের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত নিয়োগ নির্ধারিত হয়। তাছাড়া, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল ভবিষ্যৎ পদোন্নতির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই, পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি। আগের প্রশ্ন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, লিখিত পরীক্ষায় মোট ৮০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি: মুক্তিযুদ্ধ ও বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব
বাংলাদেশ অংশ থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করে। যেহেতু এটি বিদ্যুৎ-সংশ্লিষ্ট সংস্থার চাকরির পরীক্ষা, তাই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান অবস্থা, শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে মানুষের উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য শক্তির ভূমিকা, পল্লী বিদ্যুতের প্রভাব এবং সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিষয়াবলি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে।
এছাড়া, জুলাই বিপ্লব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, মেগা প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি
আন্তর্জাতিক অংশে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা থাকে। এ অংশের জন্য সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক সমস্যা, যুদ্ধ, মহামারি, ব্লু ইকোনমি, নবায়নযোগ্য শক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত ইস্যুগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
বিশ্ব রাজনীতি, মধ্যপ্রাচ্য সংকট, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন পরিস্থিতি, চীন-তাইওয়ান সম্পর্ক, ব্রেক্সিটের প্রভাব, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থনীতি নিয়েও পড়াশোনা করতে হবে।
গণিত: পাটিগণিতের ওপর গুরুত্ব দিন
গণিত অংশে সাধারণত ৩-৪টি প্রশ্ন আসে। তবে, সর্বশেষ পরীক্ষায় গণিত অংশ থেকে প্রশ্ন আসেনি। তবুও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। গণিত অংশে পাটিগণিত বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকেই অধিকাংশ প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা থাকে।
গণিতের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়সমূহ:
- ধারা (Arithmetic & Geometric Progression)
- লাভ-ক্ষতি (Profit & Loss)
- সরল ও যৌগিক মুনাফা (Simple & Compound Interest)
- লসাগু (LCM) ও গসাগু (HCF)
- শতকরা হিসাব (Percentage)
- অনুপাত ও সমানুপাত (Ratio & Proportion)
- সময় ও দূরত্ব (Time & Distance)
- পরিমিতি (Mensuration)
অনুবাদ: বাংলা ও ইংরেজিতে দক্ষতা বৃদ্ধি করুন
বাংলা থেকে ইংরেজি এবং ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ লিখিত পরীক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত দুটি অনুবাদ প্রশ্ন আসে। অনুবাদে ভালো করতে হলে নিয়মিত অনুশীলন করা জরুরি।
অনুবাদ দক্ষতা বাড়ানোর উপায়:
- বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা নিয়মিত পড়ুন।
- একই পত্রিকার বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণ পাশাপাশি পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- কঠিন শব্দ ও বাক্য গঠনের কৌশল শিখুন।
- ইংরেজি গ্রামারের ওপর ভালো দখল রাখুন।
শর্ট নোট: সংক্ষেপে তথ্য উপস্থাপনের কৌশল
পরীক্ষায় ৪-৫টি শর্ট নোট আসতে পারে। এগুলো বাংলা বা ইংরেজি দুইভাবেই আসতে পারে। যদি বাংলা ভাষায় প্রশ্ন আসে, তবে উত্তর বাংলায় দিতে হবে; ইংরেজিতে এলে উত্তর ইংরেজিতে লিখতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ শর্ট নোটের টপিকসমূহ:
- জুলাই বিপ্লব
- বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত
- তত্ত্বাবধায়ক সরকার
- ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার অবদান
- বাংলাদেশের অর্থনীতি
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ
- জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়ন
উত্তর লেখার কৌশল ও সময় ব্যবস্থাপনা
লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে হলে সঠিক তথ্য ও স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করাই মূল চাবিকাঠি।
সময়সচেতনতা ও উত্তর লেখার কৌশল:
- প্রশ্ন বুঝে নিয়ে সময় বণ্টন করুন।
- প্রথমে যেসব প্রশ্নের উত্তর ভালোভাবে জানেন, সেগুলো লিখুন।
- প্রতিটি উত্তর পরিষ্কার, সুসংগঠিত ও তথ্যসমৃদ্ধ হতে হবে।
- অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় তথ্য সংযোজন এড়িয়ে চলুন।
- ব্যাকরণগত ও বানানজনিত ভুল এড়িয়ে লিখুন।
- প্রতিটি উত্তর যথাযথ উদাহরণ ও পরিসংখ্যানসহ উপস্থাপন করুন।
পরীক্ষার আগে চূড়ান্ত প্রস্তুতি: কী করবেন?
১. প্রাত্যহিক সময় পরিকল্পনা করুন – প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে অধ্যয়ন করুন।
২. নোট তৈরি করুন – নিজস্ব ভাষায় সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ টপিক নোট করুন।
3. নিয়মিত অনুশীলন করুন – লিখিতভাবে উত্তর অনুশীলন করুন।
4. প্র্যাকটিস টেস্ট দিন – সময় ধরে মডেল টেস্ট দিন ও উত্তর মূল্যায়ন করুন।
5. পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্র সমাধান করুন – এর মাধ্যমে প্রশ্নের ধরণ সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
6. নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঠিক রাখুন – পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন।
সাফল্যের মূলমন্ত্র: অধ্যবসায়, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস
সহকারী পরিচালক পদে সফলতার জন্য প্রয়োজন কঠোর অধ্যবসায়, নিয়মিত অনুশীলন এবং আত্মবিশ্বাস। সঠিক প্রস্তুতি, সময় ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আপনি লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারবেন। সফলতার জন্য আগেভাগে প্রস্তুতি শুরু করুন এবং লক্ষ্য অর্জনে মনোযোগ দিন।
আপনার সাফল্য কামনা করছি! ????????
আপনার মতামত লিখুন :