এমনকী, ২০০৯ সালে সিএনএন একজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। যেখানে আওকিগাহারার জঙ্গলে তিনি নিজের জীবন শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন। সেই ব্যক্তি বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছিল। তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। সেই কারণে তিনি জঙ্গলে আত্মহত্যা করেছিলেন।
জাপান: ‘মা-বাবার দেওয়া অন্যতম উপহার হল জীবন। তাই আপনার সন্তান ও পরিবারের কথা ভাবুন। যা যা সমস্যা রয়েছে তা নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সকলকে জানান’—একটি জঙ্গলের বাইরে ঠিক এই ধরণের সাইনবোর্ড রাখা রয়েছে। কেন জানেন?
জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে মাত্র ২ ঘণ্টা দূরে একটি জঙ্গলের বাইরে লাগানো রয়েছে সাইনবোর্টটি। সাধারণত বনের বিপজ্জনক প্রাণীদের থেকে সতর্ক করার জন্য সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়। কিন্তু জাপানের আওকিগাহারা নামের এই জঙ্গলে মানুষকে আত্মহত্যা না করতে উৎসাহিত করা হয়।
আসুন জেনে নেওয়া যাক এই রহস্যময় স্থান সম্পর্কে
ওকিগাহারা বন প্রায় ৩৫ বর্গ কিমি জুড়ে বিস্তৃত। এটি এতই ঘন যে একে ‘গাছের সমুদ্র’ও বলা হয়। অনেকেই এখানে বেড়াতে আসেন। তবে সব পর্যটকের এমন উদ্দেশ্য থাকে না।
২০১৩-২০১৫ সালের মধ্যে এখানে ১০০ টিরও বেশি আত্মহত্যার খবর পাওয়া গিয়েছে। সেই কারণে এখন জাপান সরকার আওকিগাহারার জঙ্গলের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান কত তা জনগণকে বিস্তারিত ভাবে জানায় না।
সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজের পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এই ওকিগাহারা জঙ্গলে। এই কারণেই জঙ্গলকে বলা হয় ‘সুইসাইড ফরেস্ট’। কিন্তু সবসময় এই জায়গা কিন্তু এমন ছিল না। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে, প্রায় হাজার বছর আগে এখানে শুধু লাভা প্রবাহিত হত। প্রকৃতপক্ষে, ৮৬৪ সালে, জাপানের মাউন্ট ফুজিতে একটি বিস্ফোরণ হয়েছিল। যা ছ’মাস ধরে চলেছিল। সেই সময় আশেপাশের অনেক গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়। গত কয়েকশো বছর ধরে সেই লাভা জমাট বেধে ঘন-ঘন বন তৈরি হয়েছে। এই বন আজ ওকিগাহারা নামে পরিচিত।
১৯৬০ সালের জনপ্রিয় ছোটগল্প ‘টাওয়ার অফ ওয়েভস’-এও আওকিগাহার উল্লেখ রয়েছে। গল্পটি এক প্রেমিক ও প্রেমিকার। যাদের সমাজ বাধা দেয়। শেষ পর্যন্ত প্রেমিকা গিয়ে ওই জঙ্গলে আত্মহত্যা করেন।
এমনকী, ২০০৯ সালে সিএনএন একজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। যেখানে আওকিগাহারার জঙ্গলে তিনি নিজের জীবন শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন। সেই ব্যক্তি বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছিল। তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। সেই কারণে তিনি জঙ্গলে আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে এ কাজে তিনি সফল হতে পারেননি। বনে পৌঁছানোর পর লোকটি তাঁর কব্জি কেটে ফেলেছিলেন।
এলাকাবাসীর মতে, ওই জঙ্গলে রহস্যময় জাদুকরী শক্তি রয়েছে। সেখানকার বিশ্বাস, বনে ভূতের বাস, আছে। সেই কারণে তারাই মানুষজনকে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতে বাধ্য করে। এছাড়াও এই জঙ্গল এত গভীর যে এখানে হারিয়ে গেলে বের হওয়া খুব কঠিন। কম্পাস বা মোবাইলের মতো প্রযুক্তিও নাকি এখানে কাজ করে না। এখানে কাজ করে না। পথ খোঁজার আগেই অনেকে বন্য পশুর শিকারে পরিণত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :