চীনে আইফোনের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। এর মধ্যে চীনের ব্যবসা নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়ার যে অভিযোগ অ্যাপলের বিরুদ্ধে এনেছিলেন শেয়ারহোল্ডাররা, তাঁদের শান্ত করতে আদালতের হস্তক্ষেপের বাইরে ৪৯০ মিলিয়ন বা ৪৯ কোটি ডলারের বিনিময়ে সমঝোতা করতে রাজি হয়েছে অ্যাপল।
ব্লুমবার্গের সূত্রে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, অ্যাপল যে শুধু চীনের অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়; একই সঙ্গে মার্কিন-চীন বাণিজ্য সংঘাতের কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি ব্যবসায়িক পরিসংখ্যান প্রকাশের এক অনুষ্ঠানে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক বলেন, উদীয়মান অর্থনীতির যেসব দেশে আইফোন বিক্রির চাপ আছে, সেগুলো হলো তুরস্ক, ভারত, ব্রাজিল ও রাশিয়া। কিন্তু চীনকে তিনি এই শ্রেণিতে ফেলতে চান না।
পরবর্তী প্রান্তিকে অ্যাপল যখন আর্থিক প্রতিবেদন পেশ করবে, তখন দেখা যাবে, টিম কুক ২০১১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম বিক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।
২০১৮ সালের পর ছয় বছর হয়ে গেল; এই সময় চীনের বাজারে অ্যাপলের পতনের বিষয়টি উপেক্ষা করার মতো নয়। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার সঙ্গে চীনের স্থানীয় ব্র্যান্ডের উত্থানের কারণে আইফোনের বেচাকেনা অনেকটাই কমেছে। অনেকেই মনে করছেন, চীনের বাজারে আইফোনের সোনালি সময়ের অবসান হয়েছে।
চীনের বাজারে আইফোনের বিক্রি টানা তিন মাস ধরে কমছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের বাজারে আইফোনের বিক্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কমেছে। এর আগে জানুয়ারি মাসে কমেছে ৩৯ শতাংশ এবং ডিসেম্বর মাসে কমেছে ৩০ শতাংশ।
বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০২৪ সালেও চীনের বাজারে অ্যাপলের অধোগতি চলমান থাকবে; অর্থাৎ ২০২৩ সালে অ্যাপলের যে ২৪ শতাংশ পতন হয়েছে, তা আরও গভীর হবে।
চীনের ক্রেতারা সাধারণত বছরের প্রথম ছয় সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি নতুন ফোন কেনেন। স্বাভাবিকভাবে ফোনের বাজারের জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু স্মার্টফোনের বাজার বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথম ছয় সপ্তাহে চীনের বাজারে আইফোনের বিক্রি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ কমেছে।
এই পরিস্থিতিতে কাউন্টার পয়েন্ট বলছে, চীনের স্মার্টফোনের বাজারে আইফোনের অবস্থান এখন চতুর্থ—বাজার হিস্যা নেমে এসেছে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০২৩ সালে সেই বাজারে ১৯ শতাংশ হিস্যা নিয়ে অ্যাপলের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। এই বাস্তবতায় বেচাকেনা বাড়াতে আলিবাবার স্টোরে আইফোনে ১৮০ ডলার পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে অ্যাপল। এ ছাড়া নিজেদের ওয়েবসাইটে ছাড় দিচ্ছে ৫০০ ইউয়ান পর্যন্ত।
এদিকে চীনের কাছে প্রযুক্তি বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় চীন নিজেও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটছে। গত বছর সে দেশে বেশ কিছু সংস্থা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অ্যাপলের আইফোন ও অন্য বিদেশি প্রযুক্তি কর্মস্থলে ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রায় এক দশকের বেশি সময় বিদেশি প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে চীন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যাংকগুলোতে স্থানীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। এমনকি চীনে স্থানীয়ভাবে সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে; এ ক্ষেত্রে কিছু সফলতাও এসেছে।
নিষেধাজ্ঞা কখনো কখনো শাপেবর হয়, যেমন চীনের ক্ষেত্রে হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদে বলা হয়েছে, চীনের স্থানীয় ব্র্যান্ড হুয়াওয়ে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার খড়্গ থেকে মুক্ত হতে নিজেরা চিপ উৎপাদনে মনোযোগী হয়, এবং পরিণামে তারা কিছুটা সফলতাও পেয়েছে। ফলে চীনের বাজারে হুয়াওয়ের ফোন বিক্রি বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় সপ্তাহে যেখানে চীনের বাজারে আইফোনের বিক্রি কমেছে ২৪ শতাংশ, সেখানে হুয়াওয়ের ফোন বিক্রি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ।
সামগ্রিকভাবে চীনের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। সে জন্য চলতি বছরের প্রথম ছয় সপ্তাহে চীনের স্মার্টফোনের বাজার পড়ে গেছে; হুয়াওয়ে ছাড়া বড় প্রায় সব কোম্পানির ফোন বিক্রি হ্রাসের হার দুই অঙ্কের ঘরে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও ফোন বিক্রয়ে প্রবৃদ্ধি হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :