সম্প্রতি মার্কিন অর্থ দপ্তরে চীনা হ্যাকারদের সাইবার হামলার অভিযোগ উঠেছে। এবছর ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় চীনা হ্যাকাররা মার্কিন অর্থ দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ নথি হ্যাক করেছে এবং বেশ কিছু তথ্য চুরি করেছে বলে দাবি করেছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এফবিআই জানিয়েছে, চীনের সরকার-সমর্থিত একটি হ্যাকার দল বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই সাইবার হামলা পরিচালনা করেছে।
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, চীনা হ্যাকাররা প্রথমে মার্কিন অর্থ দপ্তরের নথিগুলো পর্যালোচনা করে। তবে শুধু পর্যালোচনা নয়, তারা বেশ কিছু গোপন নথি চুরি করেছে। এফবিআইয়ের ভাষ্যমতে, এই সাইবার হামলায় যে সফটওয়্যারটি ব্যবহৃত হয়েছে তা সরাসরি চীনা সরকারের তৈরি। হ্যাকাররা এখনও হ্যাক করা সিস্টেমগুলোতে অ্যাক্সেস ধরে রেখেছে কি না, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়া কতগুলো ওয়ার্ক স্টেশন এই হামলার শিকার হয়েছে এবং কোন ধরনের তথ্য চুরি হয়েছে, তা নিয়েও মার্কিন কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দিষ্ট বিবৃতি দেয়নি। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না সেটিও এখনও স্পষ্ট নয়।
সাইবার নিরাপত্তার অভাব এবং উদ্বেগ
এই ঘটনা মার্কিন সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে আবারও প্রকাশ্যে এনেছে। বিশেষ করে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা উঠে এসেছে। মার্কিন অর্থ দপ্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর এমন হামলার শিকার হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
অভিযোগের বিরুদ্ধে চীনের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ বেইজিং পুরোপুরি অস্বীকার করেছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, চীন কখনো সাইবার হানা বা হ্যাকিংয়ের মতো কার্যক্রমকে সমর্থন করে না। মার্কিন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে চীন এবং এর সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই বলেও উল্লেখ করেছে।
পূর্বের অভিযোগ এবং পরিপ্রেক্ষিত
চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাইবার হামলার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছরে চীনের বিরুদ্ধে বারবার এমন অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, চীন সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় হ্যাকারদের দ্বারা সরকারি দপ্তরগুলোতে এমন হামলা চালানো হয়। তবে চীন বরাবরই এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। চীনের দাবি, সাইবার নিরাপত্তা রক্ষায় তারা বরাবরই নীতিগত অবস্থান মেনে চলে।
বিশ্বব্যাপী সাইবার হামলার প্রবণতা
মার্কিন অর্থ দপ্তরে চীনা হ্যাকারদের হামলার ঘটনা বিশ্বব্যাপী সাইবার হুমকির নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর আগে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং অন্যান্য দেশেও সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়ার হ্যাকারদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা হ্যাকিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে র্যানসমওয়্যার হামলার মাধ্যমে ডার্কসাইড নামক একটি হ্যাকার দল গুরুত্বপূর্ণ পাইপলাইন বন্ধ করে দিয়েছিল।
তদন্ত এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
বর্তমানে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এই সাইবার হামলার তদন্ত করছে। এই ঘটনার পর সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য মার্কিন কর্তৃপক্ষ নতুন পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শেষ কথা
মার্কিন অর্থ দপ্তরে চীনা হ্যাকারদের সাইবার হামলা একটি বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকটের ইঙ্গিত দেয়। এই ঘটনা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয় বরং গোটা বিশ্বের জন্যই সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়। প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ এবং সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :