২১ অক্টোবর ২০২৪ (সোমবার) তুরস্কের মুসলিম ধর্মগুরু ফেতুল্লাহ গুলেন ইহলোক ত্যাগ করেন। ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পরিচিত ফেতুল্লাহ গুলেন রবিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়াতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। গুলেনের খুতবা প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ‘হারকুল’ সোমবার এক্স অ্যাকাউন্টে জানান গুলেন রবিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ফেতুল্লাহ গুলেন ইসলামী আন্দোলনের নেতা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবন ছিল এক চরম বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। একসময় তিনি রাষ্ট্রের সেবক হিসেবে পরিচিত থাকলেও মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে বিতর্কের কোনও শেষ নেই। ১৯৬০-এর দশকে এরজুরুমে মসজিদের ইমাম হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন গুলেন। তখন তিনি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে সমর্থন করে কমিউনিজমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন এবং কমিউনিজম বিরোধী সংগঠনের সদস্য হিসেবে কাজ করতেন।
১৯৭০-এর দশকে গুলেন নিজস্ব একটি দল গঠন করেন এবং ১৯৮০ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের সময় সরাসরি সামরিক সরকারের পক্ষে অবস্থান নেন। এই সমর্থন তাঁকে রাজনৈতিক মর্যাদা এনে দেয় এবং পরে তুরস্কের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর সংগঠনের স্কুল ও প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সহায়তায় গুলেনের প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
১৯৯৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির সামরিক হস্তক্ষেপকে গুলেন সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ১৯৯৯ সালে সরকারের তদন্তের মুখে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এরপর এরদোগানের নেতৃত্বে `একেপার্টি` প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গুলেন এবং এরদোগানের রাজনৈতিক পথ একত্রিত হয়। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে গুলেন ও এরদোগানের যৌথ শাসনামলে তুরস্কে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটে এবং এই সময় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সমর্থনও বৃদ্ধি পায়।
তবে ২০১৩ সালের পর গুলেন এবং এরদোগান এর মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরতে শুরু করে। ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই গুলেনের সমর্থকরা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়, যা এরদোগান-কে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়। ফেতুল্লাহ গুলেনের জীবন ছিল সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়াশীলতার সেবায় উৎসর্গিত। যা আজও রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :