পাকিস্তানে কারারুদ্ধ বিরোধীদলীয় নেতা ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থকরা লং মার্চ চালিয়ে যাচ্ছে। ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবি, খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর, এবং বিরোধী নেতা ওমর আইয়ুবের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে অগ্রসর হয়েছেন।
ইসলামাবাদ অভিমুখে লং মার্চ
পিটিআই সমর্থকেরা ইসলামাবাদের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ডি চকে অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। তবে সরকারি বাহিনীর বাধায় তা সম্ভব হয়নি। ডি চক হলো পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট, পার্লামেন্টসহ বহু সরকারি ভবন অবস্থিত। সেখানে যাওয়ার প্রধান সড়কগুলোতে শিপিং কন্টেইনার এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে।
সরকারের কড়া অবস্থান এবং ব্যাপক নিরাপত্তা সত্ত্বেও পিটিআই সমর্থকরা বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। তারা জানিয়েছে, টিয়ার গ্যাস, ব্যাটন চার্জ, এবং গ্রেফতারি অভিযান তাদের মনোবল ভাঙতে পারবে না।
সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা
সোমবার (২৫ নভেম্বর) ইসলামাবাদের উপকণ্ঠে পুলিশের সঙ্গে পিটিআই সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহত পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিতর্ক চলছে।
পিটিআই জানিয়েছে, তাদের পাঁচজন সংসদ সদস্যসহ কয়েক হাজার সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে সরকারের দাবি, বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
বুশরা বিবির নেতৃত্বে বক্তব্য
ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে একটি ট্রাকে বসে সম্পূর্ণ বোরখা পরিহিত অবস্থায় বুশরা বিবি বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, "ইমরান খানের মুক্তি এবং আমাদের লক্ষ্য অর্জনে আমরা বদ্ধপরিকর।" বক্তব্য শেষে তিনি "আল্লাহ মহান" স্লোগান দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন।
সরকারের অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের ওপর হামলা মেনে নেওয়া হবে না। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই পিটিআইয়ের কর্মসূচিকে বেআইনি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্দেশ দিয়েছে।
সরকার পিটিআই কর্মীদের আন্দোলন দমন করতে ইতোমধ্যে ৪,০০০-এর বেশি সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। পাশাপাশি নিরাপত্তাজনিত কারণে কিছু এলাকায় মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। পিটিআই দাবি করেছে, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় তাদের আন্দোলনের সমন্বয় বিঘ্নিত হচ্ছে।
ইমরান খানের জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক বিতর্ক
ইমরান খান এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দী। তার বিরুদ্ধে ১৫০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তবে পিটিআই বলছে, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইমরান খান তার সমর্থকদের চলমান আন্দোলনকে "চূড়ান্ত ডাক" বলে উল্লেখ করেছেন এবং বিক্ষোভ স্থগিত করার কোনো গুজবে কান না দিতে বলেছেন।
অর্থনৈতিক প্রভাব
এই বিক্ষোভ পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, চলমান অচলাবস্থা ও বিক্ষোভের কারণে দেশটির অর্থনীতিতে কোটি কোটি রুপির ক্ষতি হচ্ছে।
সংঘর্ষের ভবিষ্যৎ
সরকার এবং পিটিআইয়ের মধ্যে আলোচনা চলমান বলে জানা গেছে। তবে এই বিক্ষোভ কতটা দীর্ঘ হবে এবং কীভাবে সমাধান হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
আপনার মতামত লিখুন :