নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে জার্মানির বিভিন্ন শহরে আবার বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভে বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছেন।
বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা জার্মানির গণতান্ত্রিক দলগুলোকে ‘নব্যনাৎসি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জার্মানির জন্য বিকল্প (অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড) দলটিকে সহযোগিতা না করার জন্য আহ্বান জানান।
গতকাল শনিবার ছিল ছুটির দিন। আবহাওয়া ছিল রৌদ্রময়। এর মধ্যে জার্মানির বিভিন্ন শহরের কেন্দ্রস্থলে নানা শ্রেণি-পেশা-বয়সের মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। তাঁরা ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় জার্মানির ২১তম নির্বাচনে অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানান।
গতকাল সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয় মিউনিখে। এখানকার বিক্ষোভে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ অংশ নেন।
মিউনিখের থেরেসিয়েন মাঠের এই বিক্ষোভের মূল সুর ছিল, ‘গণতন্ত্র চাই।’
বিক্ষোভের অন্যতম আয়োজক ছিল ‘গ্র্যান্ডমা এগেইনস্ট রাইটিস্ট’ নামের একটি সংগঠন। সহ–আয়োজক ‘মিউনিখ ইজ কালারফুল’। এই সংগঠনের সভাপতি মিকি ভেনগাটজ বলেন, ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন দলের আচরণই নির্ধারণ করবে, অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড ক্ষমতার অংশীদার হবে কি না। ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন অন্যান্য দলের মতো অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড থেকে দূরে থাকবে কি না, তা দেখার বিষয়।
মিকি ভেনগাটজ মিউনিখের একজন সিটি কাউন্সিলর। তিনি সামাজিক গণতান্ত্রিক দলের একজন সদস্য।
হ্যানোভারে আয়োজিত বিক্ষোভে ২৫ হাজার মানুষ অংশ নেন। পুলিশের একজন মুখপাত্রের তথ্যমতে, শহরের কেন্দ্রস্থল ক্রোপকে ও ওপারন স্কয়ারে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেন।
হ্যানোভার শহরের বিক্ষোভে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও দেশটির সামাজিক গণতান্ত্রিক দলের নেতা বরিস পিস্টোরিয়াস বলেন, ‘আমরা আবার ১৯৩৩ সাল-পরবর্তী নাৎসি জামানায় ফিরে যেতে চাই না। নাৎসিদের ইতিহাস আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।’
বিক্ষোভে অভিবাসীদের পক্ষে বক্তব্য দেন হ্যানোভার আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক লিপি আহমেদ। তিনি বলেন, শুধু অভিবাসী নয়, জার্মানির সব জনগণের জন্য বিপদ ডেকে আনবে নব্যনাৎসি অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটি।
গতকাল জার্মানির ব্রিমেন, রোস্টক, গিসেন, বিলেফেল্ড, ডার্মস্ট্যাড, ডর্টমুন্ড প্রভৃতি শহরেও বিক্ষোভ হয়। এসব বিক্ষোভে হাজারো মানুষ অংশ নেন।
নব্যনাৎসি অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটির বিরুদ্ধে গত সপ্তাহান্তে জার্মানির অনেক শহরে বিক্ষোভ হয়। গত রোববার বার্লিনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ অংশ নেন। আজ রোববার বার্লিন তোরণ প্রাঙ্গণে আবার বিক্ষোভ হওয়ার কথা।
নির্বাচন সামনে রেখে গত ২৯ জানুয়ারি জার্মান পার্লামেন্টে কঠোর অভিবাসননীতির পরিকল্পনা প্রস্তাব করে দেশটির অন্যতম বড় দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ)। প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে পাসের জন্য সহায়তায় এগিয়ে আসে জার্মানির কট্টর রক্ষণশীল ও অভিবাসীবিরোধী দল অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড। তবে জার্মান পার্লামেন্টে প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হওয়ার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেতে ব্যর্থ হয়। ফলে প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়।
প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে আনার পর জার্মানিজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। জার্মানির উত্তরের শহর কিল থেকে দক্ষিণের ফ্রাইবুর্গ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এসব বিক্ষোভে হাজারো মানুষ অংশ নেন। বিক্ষোভকারীর এই ধরনের পরিকল্পনার নিন্দা জানান। অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখান।
অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটি কট্টর অভিবাসীবিরোধী হিসেবে পরিচিত। দলটি ইতিমধ্যে নব্যনাৎসি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :