বাংলাদেশ রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১

রাখাইনে আরাকান আর্মির দখলদারিত্ব: সীমান্তে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪, ১১:০৩ এএম

রাখাইনে আরাকান আর্মির দখলদারিত্ব: সীমান্তে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

আরাকান আর্মির দখলে রাখাইন। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি (AA) ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক ঘটনায় বিদ্রোহী এই গোষ্ঠীটি সীমান্ত রক্ষী পুলিশ ব্যারাক (BGP5) দখল করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭০ কিলোমিটার অংশ সম্পূর্ণরূপে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

পটভূমি 

২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। আরাকান আর্মি নিজেদের প্রশাসনিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধীরে ধীরে সেনাবাহিনীর শক্ত ঘাঁটিগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিচ্ছে। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে BGP5 ব্যারাক ঘেরাও করে আরাকান আর্মি। এটি ছিল সেনাবাহিনীর উত্তর রাখাইন অঞ্চলের শেষ শক্ত ঘাঁটি, যা ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা গ্রাম মায়ো থু গি ধ্বংস করার পর নির্মাণ করা হয়েছিল।

সংঘর্ষ 

মাসব্যাপী সংঘর্ষে আরাকান আর্মি তাদের শক্তিশালী অস্ত্র ও কৌশল ব্যবহার করে ব্যারাক দখলে নেয়। মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য খুঁটি বসানো খাল, বাংকার এবং হাজারেরও বেশি মাইন স্থাপন করলেও আরাকান আর্মি সেসব অবরোধ ভেঙে ফেলে। কয়েক মাসের লড়াই শেষে সেনারা গোলাবারুদ ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে আত্মসমর্পণ করে।

এই সংঘর্ষে ৪৫০ জনেরও বেশি সৈন্য নিহত হয়েছে বলে আরাকান আর্মি দাবি করেছে। ব্যারাকের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরেইন তুনসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বন্দী হয়েছেন। যুদ্ধের ফলে মংডু ও আশেপাশের প্রায় ৮০% বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে এই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।

রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ

রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিতই থেকে গেছে। মংডু শহর রোহিঙ্গাদের প্রধান এলাকা হলেও আরাকান আর্মি এখনো তাদের ফিরে আসার অনুমতি দেয়নি। যদিও বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে রোহিঙ্গাদের সাথে সম্পর্ক এখনও উত্তেজনাপূর্ণ।

বর্তমানে রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এটি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। যদি রাজধানীও দখল হয়, তবে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের প্রথম বিদ্রোহী গোষ্ঠী হিসেবে একটি রাজ্যের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।

উপসংহার 

আরাকান আর্মির এই বিজয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জন্য বড় পরাজয়। তবে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

 

 

Link copied!

সর্বশেষ :