বাংলাদেশ রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

ওয়াশিংটনে উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ৩০ মরদেহ উদ্ধার

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৫, ০৭:৫৪ পিএম

ওয়াশিংটনে উড়োজাহাজ  ও  হেলিকপ্টার  বিধ্বস্তের ৩০ মরদেহ উদ্ধার

রোনাল্ড রিগ্যান ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাছে পটোম্যাক নদীতে উদ্ধার তৎপরতা চলছে। ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ভয়াবহ এক বিমান দুর্ঘটনায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে রোনাল্ড রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাছে মাঝ আকাশে যাত্রীবাহী একটি উড়োজাহাজের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ হয়। এরপরই দুটি যানই হিমশীতল পটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত:
আমেরিকান এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি তাদের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ছিল এবং এতে ৬০ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে, মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে হেলিকপ্টারটিতে তিনজন সেনা সদস্য ছিলেন।

উদ্ধার তৎপরতা:
দুর্ঘটনার পরপরই জরুরি উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে নদী থেকে মরদেহ উদ্ধারের কাজ শুরু করেন। এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বাকি নিখোঁজ যাত্রীদের সন্ধানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে কোস্ট গার্ড ও অন্যান্য উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো। তবে তীব্র ঠান্ডা ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

কীভাবে দুর্ঘটনাটি ঘটল?
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটি প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে ছিল। সেনাবাহিনীর জয়েন্ট টাস্কফোর্স-ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়নের গণমাধ্যমবিষয়ক প্রধান হেদার চাইরেজ সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন যে সামরিক হেলিকপ্টারটি অনুমোদিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তবে কী কারণে দুটি উড়োজাহাজের মধ্যে সংঘর্ষ হলো, সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ও ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে।

পরিবারের উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া:
বিমানবন্দরে স্বজনদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দুর্ঘটনার পরপরই তাঁরা বিমানবন্দরে জড়ো হতে থাকেন এবং প্রিয়জনদের খোঁজ জানতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তবে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাঁরা যথেষ্ট তথ্য পাচ্ছেন না। বেশিরভাগ তথ্যই তাঁরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানতে পারছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাস:
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির পর যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে আর কোনো প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি গুরুতর ঘটনা ঘটেছে, যা ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পরিণত হতে পারত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুর্ঘটনা আবারও বিমান চলাচল ও নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করবে।

পটোম্যাক নদীতে বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাস রয়েছে। ১৯৮২ সালে এয়ার ফ্লোরিডা ফ্লাইট ৯০ পটোম্যাক নদীর ওপর ফোরটিনথ স্ট্রিট ব্রিজে বিধ্বস্ত হয়েছিল। সে ঘটনায় ৭০ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু নিহত হয়েছিলেন, মাত্র পাঁচজন বেঁচে গিয়েছিলেন। সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনো অনেকে ভুলতে পারেননি, আর এবার একই নদীতে আরেকটি বিমান দুর্ঘটনা নতুন করে শোকের ছায়া ফেলেছে।

তদন্তকারীরা এখন ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের চেষ্টা করছেন, যা দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্ধারণে সাহায্য করবে। তবে এফএএ এবং এনটিএসবি জানিয়েছে, প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে বেশ কয়েকদিন লাগতে পারে। meanwhile, পুরো দেশই অপেক্ষায় রয়েছে—কীভাবে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটল এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা জানার জন্য।

Link copied!

সর্বশেষ :