বাংলাদেশ রবিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১

চলতি মাসেই বৃদ্ধি পাচ্ছে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১১, ২০২৫, ০৪:৪০ এএম

চলতি মাসেই বৃদ্ধি পাচ্ছে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার

সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, মুনাফার হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এই পরিবর্তন আগামী ছয় মাসের জন্য কার্যকর থাকবে এবং পরবর্তী ছয় মাসের জন্য মুনাফার হার পুনঃনির্ধারণ করা হবে।

সঞ্চয়পত্রের ধরন এবং বর্তমান হার

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনে নয়টি সঞ্চয় কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় চারটি সঞ্চয়পত্র হলো:

১. পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র

২. তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র

৩. পেনশনার সঞ্চয়পত্র 

৪. পরিবার সঞ্চয়পত্র

বর্তমানে এই সঞ্চয়পত্রগুলোতে মুনাফার হার ৯ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশের মধ্যে নির্ধারিত।

নতুন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য

সরকার একটি নতুন পদ্ধতি চালু করছে, যেখানে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ট্রেজারি বন্ডের সুদের হারের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। প্রতি ছয় মাস অন্তর ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার পুনর্বিবেচনা করে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার পুনঃনির্ধারণ করা হবে। নতুন হার ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর বলে ধরা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকাশিত হবে।

নতুন মুনাফার হার

নতুন নিয়ম অনুযায়ী মুনাফার হারে নিম্নোক্ত পরিবর্তন গুলো আনা হয়েছে:

  • পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং এর বেশি বিনিয়োগে এই হার হবে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। 
  • তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে থাকবে।
  • পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত। 
  • পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সবচেয়ে বেশি মুনাফা দেওয়া হবে, যা হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
  • ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ হিসাব এবং মেয়াদি হিসাবের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। 

তবে ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডের মুনাফার হারে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

বর্তমান এবং নতুন মুনাফার হারের তুলনা

১. বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত। নতুন নিয়মে এই হার ১২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশের মধ্যে থাকবে।

২. তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে বর্তমান হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত, যা নতুন ব্যবস্থায় বেড়ে হবে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ।

৩. পরিবার সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে বর্তমান হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল, যা নতুন নিয়মে বৃদ্ধি পেয়ে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ হবে। 

৪. পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ ছিল, যা নতুন নিয়মে হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

বিনিয়োগকারীদের ধাপে পরিবর্তন

বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের জন্য তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপে ১৫ লাখ টাকার কম বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ মুনাফা পান। দ্বিতীয় ধাপে ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকার মধ্যে বিনিয়োগকারীরা কম মুনাফা পান। তৃতীয় ধাপে ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফার হার আরও কম।

নতুন নিয়মে ধাপ সংখ্যা কমিয়ে দুটি করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম বিনিয়োগকারীরা বেশি মুনাফা পাবেন। দ্বিতীয় ধাপে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগকারীদের মুনাফার হার সামান্য কম হবে।

উল্লেখযোগ্য দিক

নতুন মুনাফার হার কেবল নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রযোজ্য। ১ জানুয়ারির আগে যারা বিনিয়োগ করেছেন, তারা আগের হারে মুনাফা পাবেন। তবে মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙালে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে মুনাফার হার কমে যাবে। পেনশনার এবং পরিবার সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি মুনাফা পাবেন।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেছেন, “ট্রেজারি বন্ড এবং ব্যাংকে আমানতের সুদের হার বৃদ্ধির ফলে সরকার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বৃদ্ধির যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রাজস্ব ঘাটতির কারণেও এটি হতে পারে।”

উপসংহার

সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার বৃদ্ধির ফলে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি লাভবান হবেন। তবে এটি সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় কী প্রভাব ফেলবে, তা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। নতুন নিয়মে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

 

Link copied!

সর্বশেষ :