তীব্র গ্যাস সংকটে দেশীয় চারটি কারখানায় কয়েক মাস ধরে ইউরিয়া সার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কোম্পানি গত বছরের জানুয়ারি থেকে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে, দুটি কোম্পানি মার্চ থেকে এবং অন্যটি ১১ সেপ্টেম্বর থেকে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।
পাঁচটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইউরিয়া প্ল্যান্টের মধ্যে চারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষি চাহিদা মেটাতে ইউরিয়া সার সরবরাহে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন (বিসিআইসি) জানিয়েছে, সংকট মোকাবেলায় প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে সার আমদানির পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমন ও বুরো মৌসুমে দেশে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন টন ইউরিয়া প্রয়োজন। বর্তমানে শুধুমাত্র গোর্শাল পলাশ সার জাতীয় গ্রিড থেকে অত্যাবশ্যকীয় গ্যাস সরবরাহ করে। বাকি চারটি প্লান্টে উৎপাদন বন্ধ থাকায় চলতি আমন মৌসুম ও আসন্ন বোরো মৌসুমে ইউরিয়া সারের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
কৃষি ও সম্প্রসারণ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ টন ইউরিয়া মজুদ রয়েছে, যা দুই মাসের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। তার মতে, ইউরিয়া মজুদ না থাকলে আগামী ডিসেম্বরে সংকট দেখা দিতে পারে।
মে মাসে যখন ঘূর্ণিঝড় রেমাল বঙ্গোপসাগরে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের একটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তখন থেকে দেশের ইউরিয়া উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বন্ধ টার্মিনালটি জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতো। টার্মিনালের সংস্কার সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু গ্যাস সরবরাহ এখনও শুরু হয়নি।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) শফিউল আজম জানান, এলএনজি ঘাটতির কারণে চট্টগ্রামে সার কারখানার জন্য পেট্রোবাংলা ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দিয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) কে।
বিসিআইসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, “সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ইউরিয়া সারের চাহিদা বেশি থাকে। তাই আমরা মধ্যবর্তী পণ্য হিসেবে সার আমদানির পরিকল্পনা করেছি। কিন্তু ব্যাঙ্কে ডলারের অভাবে আমাদের জন্য ক্রেডিট লেটার খোলা একটু কঠিন।”
গত ১লা সেপ্টেম্বর প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন ইউরিয়া আমদানির জন্য সোনালী ব্যাংকের কাছে ঋণপত্র খুলতে চেয়েছিল বিসিআইসি। এরপর, ১৮ই সেপ্টেম্বর, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাডভাইজরি কমিটি সৌদি আরব ও কাতার থেকে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০,০০০ টন দানাদার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেয়। সাইদুর রহমান বলেন, ‘সব সার কারখানা চালু থাকলে বর্তমানে আমদানির প্রয়োজন হতো না।
আপনার মতামত লিখুন :