জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী অঞ্জনা রহমান আর নেই। শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
অসুস্থতা ও মৃত্যু
ডিসেম্বরের শুরুর দিকে জ্বর ও রক্তে ইনফেকশনের কারণে তাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ জানুয়ারি বিএসএমএমইউতে স্থানান্তর করা হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ৩ জানুয়ারি রাত ১:১০ মিনিটে তিনি মারা যান। তার ছেলে নিশাত মণি গণমাধ্যমকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
অসুস্থতার সময় তার শরীরে সংক্রমণ সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এতে তার হৃদযন্ত্র, কিডনি এবং ফুসফুসে গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। একপর্যায়ে স্ট্রোকও করেন তিনি। চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
জানাজা ও দাফন
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর জানিয়েছেন, অঞ্জনার জানাজা শনিবার (৪ জানুয়ারি) এফডিসিতে বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে দাফনের স্থান নির্ধারণ করা হবে।
অভিনয় জীবন
অঞ্জনা রহমান ১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন। যদিও তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল শামসুদ্দিন টগরের পরিচালনায় রহস্য-ভিত্তিক সিনেমা ‘দস্যু বনহুর’, যেখানে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন সোহেল রানা। এই সিনেমার মাধ্যমে তিনি ঢালিউডে পরিচিতি পান।

রাজ্জাক-অঞ্জনা জুটি
নায়ক রাজ রাজ্জাক ও অঞ্জনা জুটির জনপ্রিয় গান "ঢাকার শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে, লাল লাল নীল নীল বাত্তি দেইখা নয়ন জুড়াইছে" দর্শকের মনে আজও অমলিন।
ক্যারিয়ারের সাফল্য
অঞ্জনা তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ‘পরিণীতা’ ও ‘গাঙচিল’, যার জন্য তিনি দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। চলচ্চিত্র জগতে আসার আগে তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা নৃত্যশিল্পী। নাচের প্রতিভার জন্য তাকে "দেশসেরা অভিনেত্রী" হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ব্যক্তিগত জীবন ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি
অঞ্জনা প্রযোজক-পরিচালক আজিজুর রহমান বুলির (১৯৪৬–২০২২) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। এই বিবাহিত জীবনে তিনি তার স্বামীর দুটি চলচ্চিত্র "লালু সরদার" এবং "নেপালি মেয়ে" তে অভিনয় করেন। অঞ্জনার এক পুত্র, নিশাত রহমান মনি এবং এক কন্যা রয়েছে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি পরিচিত ছিলেন। যৌথ প্রযোজনার এবং বিদেশি সিনেমায় অভিনয় করা একমাত্র দেশীয় নায়িকা হিসেবে তিনি পরিচিতি পান। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট নানা অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন।
স্মরণীয় কাজ
অঞ্জনার অভিনয় ক্যারিয়ার ছিল বৈচিত্র্যময়। তিনি ‘দস্যু বনহুর’ দিয়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান। সোনালি যুগের ঢালিউডে তার অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে সামাজিক, পারিবারিক ও রহস্যমূলক গল্পনির্ভর সিনেমা।
শেষ কথা
অঞ্জনা রহমান ছিলেন একজন প্রতিভাবান অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী। তার মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ ক্যারিয়ার, অসংখ্য সাফল্য ও ভালোবাসায় তিনি চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আপনার মতামত লিখুন :