রমজান ইসলামিক বর্ষপঞ্জির পবিত্রতম মাস, যা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের জন্য রোজা, নামাজ এবং আধ্যাত্মিক চিন্তাধারার একটি সময় হিসেবে পালন করা হয়। এটি ইসলামিক চান্দ্র বর্ষপঞ্জির নবম মাস এবং অসীম বরকত, রহমত ও মাগফিরাতের সময় হিসেবে গণ্য করা হয়।
রমজানের ফজিলত
- কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে
রমজান মাসেই পবিত্র কুরআন নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়। এ কারণে এই মাসে কুরআন তেলাওয়াত ও তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। - রোজা একটি ফরজ ইবাদত
রমজানের রোজা ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। এটি আত্মাকে পবিত্র করে, আত্মনিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করে এবং তাকওয়া বাড়ায়। - শবে কদরের রাত
রমজানের শেষ দশকের একটি রাত শবে কদর, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই রাতে ইবাদত করলে অপরিসীম সওয়াব লাভ করা যায়। - জান্নাতের দরজা খোলা হয়
রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ থাকে এবং শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, ফলে সৎকর্ম করা সহজ হয়। - নেক আমলের বহুগুণ প্রতিদান
রমজানে করা প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান অন্যান্য মাসের তুলনায় বহু গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। - গুনাহ মাফের সুযোগ
নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারী, মুসলিম) - জান্নাতে প্রবেশের বিশেষ সুযোগ
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখে, তারা জান্নাতের বিশেষ দরজা ‘আর-রাইয়ান’ দিয়ে প্রবেশের সুযোগ পাবে।
রমজানে করণীয় আমল
- রোজা রাখা (সাওম)
সুবহে সাদিক (ফজর) থেকে সূর্যাস্ত (মাগরিব) পর্যন্ত খাদ্য, পানীয় ও পাপকর্ম থেকে বিরত থাকা এবং উত্তম চরিত্র বজায় রাখা। - তারাবিহ নামাজ পড়া
এশার নামাজের পর জামাতে আদায় করা বিশেষ নামাজ, যা অনেক সওয়াবের কারণ। - কুরআন তেলাওয়াত করা
যেহেতু এই মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে, তাই প্রতিদিন কুরআন পড়া ও তা নিয়ে ভাবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। - দোয়া করা
আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও বরকতের জন্য দোয়া করা উচিত। শবে কদরের জন্য সর্বোত্তম দোয়া হলো: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি”
(হে আল্লাহ, আপনি পরম ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করুন।) - দান-সদকা ও যাকাত প্রদান
গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। অনেকে রমজান মাসে যাকাত প্রদান করে যাতে সওয়াব বাড়ে। - ধৈর্য ও উত্তম চরিত্র চর্চা
রাগ নিয়ন্ত্রণ, গিবত থেকে বিরত থাকা এবং অন্যদের সাথে সদাচরণ করা রমজানের গুরুত্বপূর্ণ দিক। - ই’তেকাফ করা
রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে ইবাদতে মগ্ন থাকার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।
রমজান আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের শ্রেষ্ঠ সময়। রোজা, নামাজ ও সদকাসহ সকল উত্তম আমলের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে ও তাদের হৃদয় পবিত্র করে। এই পবিত্র মাসের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার করে আমরা আল্লাহর রহমত ও চিরস্থায়ী পুরস্কার অর্জন করতে পারি।
আপনার মতামত লিখুন :