সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপ বাতিল হয়েছে। মোট ৬,৫৩১ জন প্রার্থীর নিয়োগ স্থগিত হওয়ায় দেশের শিক্ষা ও প্রশাসনিক মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। আদালতের এই রায় একদিকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ন্যায্যতা নিশ্চিতের দাবি তুলেছে, অন্যদিকে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে হতাশা ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
২০২৩ সালের ১৪ জুন প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২৯ মার্চ, যেখানে প্রায় ৩.৫ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। ২১ এপ্রিল পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর মৌখিক পরীক্ষার জন্য ৪৬,১৯৯ জন প্রার্থীকে ডাকা হয়। এরপর ৩১ অক্টোবর চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়, যেখানে ৬,৫৩১ জন উত্তীর্ণ হন।
তবে এই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় কোটা অনুসরণ করে ফল প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা নিয়ে। নিয়োগ থেকে বাদ পড়া ৩০ জন প্রার্থী রিট আবেদন করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট নিয়োগ কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে এবং পরবর্তীতে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ বাতিলের আদেশ দেয়। আদালত মেধার ভিত্তিতে পুনরায় নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন, যা প্রশ্ন তুলেছে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে।
এই রায়ের ফলে নিয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হতে পারে, তবে ইতোমধ্যে যারা কঠিন প্রতিযোগিতা পেরিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে গেছে। অনেকেই চাকরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করেছেন এবং নিয়োগের পর নতুন জীবনের পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন। এখন তাদের আবারও নতুন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে, যা তাদের জন্য মানসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করবে।
অন্যদিকে, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের দাবি অনেক পুরনো। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে, যেখানে কোটাব্যবস্থার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। আদালতের এই রায় যদি সত্যিকার অর্থে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করে, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে দেশের শিক্ষা খাতের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এই রায়ের ফলে শিক্ষা প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে, কারণ এখন নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই স্বচ্ছ ও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে বেকারত্বের সমস্যা আরও ঘনীভূত না হয়।
সরকারের উচিত হবে নিয়োগ নীতিমালায় সুস্পষ্ট পরিবর্তন আনা, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের জটিলতা এড়ানো যায়। একইসঙ্গে, ক্ষতিগ্রস্ত চাকরিপ্রাপ্তদের জন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও ভাবা প্রয়োজন।
এই রায় ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পথে এক ধাপ হতে পারে, তবে এটি নতুন সংকটও সৃষ্টি করেছে। নিয়োগের স্বচ্ছতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের প্রতি সরকার কীভাবে সুবিচার করবে, সেটিও ভাবা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়, সে জন্য প্রশাসন ও আদালতের যৌথভাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :