বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যক্রমে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। এ নতুন কারিকুলামে পুরনো পাঠ্যক্রমের বেশ কিছু অংশ পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে এবং বিতর্কিত কিছু বিষয় ও লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হচ্ছে। নতুন করে আরবি ভাষাকে মাধ্যমিক পর্যায়ে একটি অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে যুক্ত করা হচ্ছে এবং কিছু গল্প-প্রবন্ধ বাদ দেওয়া ও নতুন রচনা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে আরবি ভাষার অন্তর্ভুক্তি
২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আরবি ভাষা একটি নতুন সাবজেক্ট হিসেবে পড়ানো হবে। এটি ২০১২ সালের কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় পুনরায় এটি মাধ্যমিক পর্যায়ে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা দ্রুত পাঠ (আনন্দ পাঠ) নামে একটি অতিরিক্ত সাবজেক্টও থাকছে।
উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন
২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক পাঠ্যক্রমে বাংলা সাহিত্য অংশে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এখানে মূলত গল্প ও কবিতা বাছাই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন করা হয়েছে। মোট ২৮টি গদ্য ও ২৮টি পদ্য অন্তর্ভুক্ত করা হলেও এই সংগ্রহে লেখকদের পরিবর্তন করা হয়েছে।
১. পরিবর্তিত রচনা: তিনজন লেখকের রচনা পরিবর্তন করা হচ্ছে। প্রমথ চৌধুরীর "বর্ষা" পরিবর্তন করে "সাহিত্যের খেলা," রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের "গৃহ" পরিবর্তন করে "অর্ধাঙ্গী," এবং কাজী নজরুল ইসলামের "আমার পথ" পরিবর্তন করে "যৌবনের গান" অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
২. সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া রচনা: চারজন লেখকের লেখা সম্পূর্ণভাবে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের "বায়ান্নর দিনগুলো," মুহাম্মদ জাফর ইকবালের "মহাজাগতিক কিউরেটর," দিলওয়ারের "মানুষ সকল সত্য," এবং মহাদেব সাহার "শান্তির গান।"
৩. অনুশীলনীর সম্পাদনা: পাঁচটি রচনার অনুশীলনী অংশেও পরিমার্জন আনা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শওকত আলীর "কপিল-দাস মুর্মুর শেষ কাজ," কাজী নজরুল ইসলামের "বিদ্রোহী" ও "সাম্যবাদী," আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর "আমি কিংবদন্তির কথা বলছি," এবং সৈয়দ শামসুল হকের "নুরুলদীনের কথা মনে পড়ে যায়।"
কারিকুলাম পরিবর্তনের কারণ
২০২৫ সালের কারিকুলামে এই পরিবর্তনের পেছনে মূলত পুরনো কারিকুলামের বিতর্কিত অংশ বাদ দেওয়া ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নতুন কিছু সংযোজন করার উদ্দেশ্য রয়েছে। এনসিটিবি এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ বি এম রিয়াজুল হাসান জানান, ২০১২ সালের পুরনো পাঠ্যক্রমে ফিরে গেলেও এতে প্রয়োজনীয় কিছু সংশোধন আনা হচ্ছে। এক বছরের মধ্যে সব পরিবর্তন একসাথে করা সম্ভব না হলেও ধাপে ধাপে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
উপসংহার
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় আরবি ভাষার পুনঃপ্রবর্তন এবং বাংলা সাহিত্য অংশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসছে। এসব পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন পাঠ্যক্রমটি সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয়তা অনুসারে সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যা শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকর হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :