বিশ্বের বৃহত্তম স্টুডেন্ট আর্কিটেকচার কম্পিটিশন ইন্সপায়ারলি এওয়ার্ড, বিশ্বের প্রায় ১৬০টিরও বেশি দেশের শিক্ষার্থীদের স্থাপত্য প্রতিভাকে তুলে ধরার প্লাটফর্ম।
যেখানে কম্পিটিশন হয় তরুণ স্থপতিদের মধ্যে। যাদেরকে দেয়া হয় স্থাপত্য, নকশা, ল্যান্ডস্কেপ ও নগর পরিকল্পনায় নিজস্ব প্রতিভা এবং সৃজনশীলতা প্রদর্শনের সুযোগ।
২০২৪ সালে আয়োজন করা হয় ৯ম বার্ষিক ইনস্পায়ারলি অ্যাওয়ার্ড কম্পিটিশন। যার স্থাপত্য বিভাগে বিশ্বের বাঘা বাঘা ইউনিভার্সিটির ফাইনালিস্টদের কাতারে জায়গা করে নেন তিন বাংলাদেশী। যাদের মধ্যে ছিলেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (MIST) এর আর্ক-৪ ব্যাচের সদ্য স্নাতক সারাফ নাওয়ার। আরও ছিলেন ব্রাক ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের রাইমা রহমান ও মো: কাফিল উদ্দিন।
দীর্ঘ যাচাই-বাছাইয়ের পর স্বতন্ত্র ডিজাইনের জোরে ৪১ জন ফাইনালিস্টের মধ্য থেকে বিজয়ের মুকুট লাভ করেন বাংলাদেশের মেধাবী সন্তান এবং MIST এর কৃতি ছাত্রী সারাফ নাওয়ার।
সারাফ তার স্নাতক থিসিস প্রজেক্ট " TALE OF AN OCEAN: Oceanarium Complex at Sonadia" নিয়ে ৮৭টি দেশের ১,১৭৪টি প্রজেক্টের সাথে প্রতিযোগিতা করে ছিনিয়ে আনেন কাঙ্ক্ষিত বিজয়। বিশ্বের দরবারে আরো একবার গর্বের সাথে তুলে ধরেন লাল-সবুজের পতাকা।
মূলত তার প্রজেক্টটি ছিলো বাংলাদেশের সোনাদিয়া দ্বীপে একটি ওশেনারিয়াম কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনার রূপরেখা। সোনাদিয়া দ্বীপ, যা বাংলাদেশের সুক্ষ্ম ইকোসিস্টেমের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেখানে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, জোয়ারের ঢেউ , আরো আছে ভৌগলিক নানান চ্যালেঞ্জ।
তিনি সব কিছু বিবেচনা করে বঙ্গোপসাগর এবং ম্যানগ্রোভ বনগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্নতা রেখেই প্রজেক্টের ডিজাইন করেছিলেন। কি নেই সে ডিজাইনে!
ডিজাইনে রয়েছে লবণাক্ত পানির অ্যাকোয়ারিয়াম, মিঠা পানির অ্যাকোয়ারিয়াম। আছে ডলফিনারিয়াম। এছাড়াও আছে একটা ওশেন হেরিটেজ মিউজিয়াম ।
সোনাদিয়া দ্বীপের পারিপার্শ্বিক চ্যালেঞ্জসমূহ, যেমন: লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড় এবং মিঠা পানির ঘাটতি মোকাবিলা করতে তিনি আবিষ্কার করেছেন মডিউলার। যাতে ব্যবহৃত হবে টেকসই উপকরণ এবং ওজনেও হালকা ।
এছাড়াও তার ডিজাইনে রয়েছে একটি সৌর শক্তি চালিত পানিশোধন ব্যবস্থা এবং বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা। সব থেকে বড় কথা তার ডিজাইনটি পুরোপুরি ইকোফ্রেন্ডলি।
যদিও দ্বীপের সকল চ্যালেঞ্জগুলো মাথায় রেখে পরিবেশগতভাবে টেকসই এবং স্ট্রাকচারাল ভাবে আকর্ষণীয় একটা ডিজাইন তৈরি করা ছিলো তার জন্যেও অনেকটা চ্যালেঞ্জিং।
সারাফ ইনস্পায়ারলি অ্যাওয়ার্ডসে প্রবেশ করেন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তার ডিজাইন, 3D ওয়াকথ্রু এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশন জমা দেন।
২০২৪ সালের আগস্টে ফাইনালিস্টদের নাম ঘোষণা করা হয় এবং ১৪ই সেপ্টেম্বর সেই কাঙ্খিত দিন। যেদিন সবাইকে পিছনে ফেলে সারাফ নাওয়ারকে স্থাপত্য বিভাগে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
জুরিবোর্ডের সদস্য মার্টিন ডুডাস্কো তার প্রজেক্টের প্রশংসা করেন, তিনি আরো বলেন এটা সারাফের অসাধারণ প্রতিভা এবং সৃজনশীলতার মিশ্রণ।
আপনার মতামত লিখুন :