লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ সম্প্রতি ইসরায়েলের বেনইয়ামিনা সামরিক ঘাঁটিতে এক ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এতে চার ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং ৬৫ জনের বেশি আহত হয়েছেন। হিজবুল্লাহর ড্রোনগুলো ইসরায়েলের অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ ফাঁকি দিয়ে এই হামলা চালাতে সক্ষম হয়। এ ঘটনা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হিজবুল্লাহর ড্রোন এবং তাদের সক্ষমতা
এই হামলায় ইরানের মোহাজের-২ ড্রোনের আদলে তৈরি মিরসাদ-১ নামের ড্রোন ব্যবহার করেছে হিজবুল্লাহ। এই ড্রোনগুলো ৪০ কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক বহন করতে পারে এবং ঘণ্টায় ৩৭০ কিমি বেগে উড়ে সর্বোচ্চ ১২০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম। মিরসাদ-১ ড্রোন হিজবুল্লাহ ২০০২ সাল থেকে নজরদারি ও আক্রমণের জন্য ব্যবহার করে আসছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হিজবুল্লাহর কাছে দুই হাজারেরও বেশি ড্রোন রয়েছে। যার মধ্যে শাহেদ এবং মোহাজের-৪ এর মতো অত্যাধুনিক ড্রোনও রয়েছে। ছোট উচ্চতায় এবং তীব্র গতিতে উড়তে সক্ষম এই ড্রোনগুলো ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।
বিশেষ কৌশলে হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলা
ড্রোন হামলার ঘটনায় হিজবুল্লাহ বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে ড্রোনগুলোকে রকেটের ঝাঁকের সঙ্গে একত্রে পাঠিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করে। এখান থেকে একটি ড্রোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ফাঁক গলে বেনইয়ামিনায় আঘাত হানতে পেরেছে। যা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া ও চ্যালেঞ্জ
এই হামলার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তারা খতিয়ে দেখছে কেনো সঠিক সময়ে সতর্কতামূলক অ্যালার্ম বাজেনি এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর হয়নি। আরো দেখা হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে কার্যকর আয়রন ডোম মিরসাদ-১ এর মতো ছোট ড্রোন শনাক্ত করতে কেন অক্ষম প্রমাণিত হলো।
এ ঘটনার পর ইসরায়েলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নতুন প্রযুক্তি সংযোজনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। হিজবুল্লাহর ড্রোন প্রযুক্তির উৎকর্ষতা এবং তাদের আক্রমণাত্মক সক্ষমতা ইসরায়েলের জন্য এখন বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হিজবুল্লাহর এই ড্রোন হামলা শুধু তাদের সক্ষমতার ইঙ্গিতই নয় বরং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাও উন্মোচিত করেছে। ইসরায়েলের আয়রন ডোম ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে কার্যকর হলেও ড্রোন মোকাবিলায় যে ব্যর্থ, তা এখন স্পষ্ট। ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এই দুর্বলতা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
আপনার মতামত লিখুন :