প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও অক্টোবরের প্রথম সোমবার ঘোষণা করা হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিদের নাম। ২০২৪ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রুভকুন। তারা মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার এবং জিন নিয়ন্ত্রণে মাইক্রোআরএনএ এর পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল ভূমিকা নিয়ে গবেষণার জন্য এই পুরস্কার পাচ্ছেন। তাদের এই আবিষ্কার জিনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের একটি মৌলিক নীতি যা উন্মোচন করলো জীববিজ্ঞানের এক নতুন দিক।
মাইক্রোআরএনএ এর ভূমিকা
মাইক্রোআরএনএ হলো ছোট আরএনএ অণু যা কোষে জিন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যামব্রোস ও রুভকুনের গবেষণা পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল পর্যায়ে জিন নিয়ন্ত্রণের ওপর আলোকপাত করেছে। এর মাধ্যমে তারা দেখিয়েছেন কীভাবে মাইক্রোআরএনএ অণুগুলো জিনের কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত করতে পারে এবং প্রাণীর শরীরের গঠন, কাজ এবং রোগের প্রতিক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে।
নোবেল পুরস্কার ঘোষণা এবং পুরস্কারের আর্থিক মূল্য
আজ সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪, স্টকহোমে নোবেল অ্যাসেম্বলি অ্যাট ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের সেক্রেটারি থমাস পার্লম্যান আনুষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করেন। নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার), যা দুই বিজয়ীর মাঝে ভাগ করে দেওয়া হবে।
নোবেল পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার থেকে নোবেল পুরস্কারের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শুরু হয়। ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যা সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের রেখে যাওয়া অর্থ থেকে প্রদান করা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১১৪টি নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছেন ১৩ জন নারী বিজ্ঞানীও ।
২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তরা
২০২৩ সালে হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান বায়োকেমিস্ট ক্যাটালিন কারিকো এবং আমেরিকান ইমিউনোলজিস্ট ড্রিউ ওয়েজম্যান যৌথভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তারা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য ব্যবহৃত এমআরএনএ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন যা বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করেছে।
অন্য বিভাগগুলোর নোবেল পুরস্কার
চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কারের পরে একে একে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য এবং শান্তি বিভাগে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। সাধারণত নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা করা হয় নরওয়ে থেকে। অন্যদিকে চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং সাহিত্যের পুরস্কারগুলো সুইডেন থেকে ঘোষণা করা হয়। নাম ঘোষণা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারটি ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হবে।
এ বছর নোবেল জয়ের সম্ভাব্য আলোচনায় যারা আছেন
এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য বেশ কয়েকজন লেখকের নাম আলোচনায় এসেছে। অনেকে ধারণা করছেন চীনের লেখক ক্যান সুই এ বছর সুইডিশ একাডেমির পছন্দ হতে পারেন।
তবে সুইডেনের সংবাদপত্র ড্যাজেন নাইহেতারের সংস্কৃতি সম্পাদক বর্ন উইম্যানের মতে এ বছর ইউরোপের বাইরের কোনো ভাষার নারী লেখক সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন। এর আগে ২০১২ সালে চীনা লেখক মো ইয়ান সাহিত্যে নোবেল জিতেছিলেন।
এ ছাড়া আলোচনায় আছেন অস্ট্রেলিয়ার ঔপন্যাসিক জেরাল্ড মারনানি, যুক্তরাজ্যের লেখক সালমান রুশদি, আর্জেন্টাইন-আমেরিকান লেখক জ্যামাইকা কিনকেইড, কানাডার কবি অ্যান কারসন, হাঙ্গেরির লাসলো ক্রাসনাহোরকাই, রোমানিয়ার মিরসিয়া কার্তারেস্কু, কেনিয়ার এনগুগি ওয়া থিওং’ও, এবং জাপানের হারুকি মুরাকামি।
আপনার মতামত লিখুন :