রংপুর নগরীর বুড়িহাট বাজারে শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে তুলার কারখানা এবং চারটি ঔষধের দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে জানা গেছে যে, একদল শ্রমিক একটি চারতলা ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করছিলেন। নির্মাণসামগ্রী ছাদে তোলার জন্য একটি ক্রেন ব্যবহার করা হচ্ছিল, কিন্তু ক্রেনটি পাশের বিদ্যুতের তারের সঙ্গে লেগে গিয়ে সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। প্রথমে মেঝের ওপর থেকে ধোঁয়া উঠতে থাকে এবং তারপর অগ্নিকাণ্ড দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানায়, আগুনের দ্রুত বিস্তার দেখে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এতে প্রথমে তুলার কারখানায় ধোঁয়া উঠতে থাকে এবং তারপর কারখানার ভিতরে আগুনের আঁচ স্পষ্ট হয়ে যায়। একপর্যায়ে আগুন এতটাই ব্যাপক হয়ে ওঠে যে, সেখান থেকে বিকট শব্দ শোনা যায় এবং সারা এলাকায় তীব্র আগুনের আলোকচ্ছটা দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আগুন এতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে কারখানার ভিতরে আগুনের শিখা দেখতে থাকা মানুষের জন্য প্রাণ বাঁচানো সম্ভব ছিল না।
প্রত্যক্ষদর্শী হোমিও চিকিৎসক আবদুল হাকিম বলেন, "আমি দেখতে পাই, একটি বালুর ট্রাক থেকে ক্রেন দিয়ে ছাঁদের ওপরে বালু তোলা হচ্ছিল। একদম হঠাৎ, ক্রেনটি বিদ্যুতের তারের সঙ্গে লেগে যায়, আর তার পরপরই আগুন লেগে যায়। এর পরই তুলার কারখানা থেকে ধোঁয়া উঠতে শুরু হয় এবং দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।"
কারখানা মালিকের ছেলে মাসুদ ঘটনাস্থলে এসে তাঁর কারখানার অবস্থা দেখে বলেন, "সব কিছু পুড়ে গেছে। আমরা এসে দেখি, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তা নিভাতে অনেক সময় লাগছে। এখন শুধু ছাই ছাড়া আর কিছুই দেখছি না।"
গঙ্গাচড়া ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার আরিফুল ইসলাম জানান, "আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। আগুনের ধরন দেখে আমরা রংপুর সদরের ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা চাই। তারা দ্রুত এসে আমাদের সঙ্গে আগুন নিভানোর চেষ্টা করে। প্রায় আড়াই ঘণ্টার প্রচেষ্টার পর আগুন নিভানো সম্ভব হয়।"
তবে, অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তদন্ত চলমান রয়েছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাজান জানান, "আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাই এবং নিশ্চিত করি যে, কেউ অগ্নিকাণ্ড এলাকা থেকে কিছু নিয়ে যেতে না পারে।"
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রংপুরের পুরো এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, এমন ধরনের অগ্নিকাণ্ড ভবিষ্যতে আরও হতে পারে যদি বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী না করা হয় এবং নির্মাণ কাজ চলাকালীন সতর্কতা অবলম্বন করা না হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিভিন্ন এলাকা এবং শিল্প কারখানায় বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামোর দুর্বলতা অনেক বড় সমস্যা। বিশেষ করে, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ক্রেনের মতো ভারী যন্ত্রপাতি বিদ্যুতের তারের কাছে থাকলে, এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এবং কারখানার মালিকরা জানান, এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে তাঁদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। কারখানা এবং দোকানের মালিকরা দাবি করেছেন যে, তাঁদের বিপুল পরিমাণ পণ্য এবং যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে এবং তাদের ব্যবসার কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য যথাযথ তদন্ত এবং ক্ষতিপূরণের দাবি করেছেন।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁরা আগুনের সূত্রপাত এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে চাইছেন। ভবিষ্যতে যাতে এমন দুর্ঘটনা না ঘটে, তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
এ ঘটনার পর, অনেকেই রংপুর শহরে দ্রুত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তার অভাব রয়েছে এবং আগুন লাগার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন বলে তারা অভিমত দিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় প্রশাসন ঘটনা তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ এবং আগুনের প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা করছে। তবে, স্থানীয়রা আশা করছেন যে, এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে প্রতিরোধ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা যায়।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, বিদ্যুৎ সংযোগ এবং নির্মাণ কাজের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো ধরনের অবহেলা বা অসতর্কতা মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে, যা শুধু সম্পদের ক্ষতি করে না, বরং মানুষের জীবনও বিপদের মধ্যে ফেলে দেয়। আশা করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
আপনার মতামত লিখুন :