বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২১ জন রাষ্ট্রদূত এর সঙ্গে এক বৈঠকে দিল্লি থেকে ইউরোপীয় ভিসা সেন্টার ঢাকায় স্থানান্তরের প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করার কারণে অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা পেতে সমস্যায় পড়ছেন। এর ফলে তাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছে এবং ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের হারাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, যদি ভিসা সেন্টার ঢাকায় অথবা বাংলাদেশের প্রতিবেশী কোনো দেশে স্থানান্তর করা হয় তবে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে। দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া এই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ’র হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার। বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে উভয়পক্ষ শ্রম অধিকার, বাণিজ্য সুবিধা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে।
ড. ইউনূস বৈঠকে বলেন, "ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। এই বিজয়ের মাসে আপনাদের সঙ্গে এমন একটি আন্তরিক আলোচনা করতে পেরে আমি আনন্দিত।" তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রের তথ্য এবং দুর্নীতি, অর্থপাচার ও ব্যাংকিং সিস্টেমের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের মিথ্যা তথ্য মোকাবিলায় সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।
বৈঠকে ড. ইউনূস জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে এবং এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এছাড়াও বৈঠকে তিনি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।
এসময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন উল্লেখ করেন, বুলগেরিয়া ইতোমধ্যেই তাদের ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম এ স্থানান্তর করেছে। তিনি অন্যান্য দেশকেও একই প্রক্রিয়া অনুসরণের আহ্বান জানান। ইইউ প্রতিনিধিরা সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়ে নতুন বাংলাদেশের লক্ষ্যে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
আপনার মতামত লিখুন :