আর দশটা দর্শনার্থীর মতো শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাটোরের রানি ভবানীর রাজবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল শিশু রাজু দাস (১০)। রাজবাড়ির গোলচত্বরের বয়রাগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল সে। হঠাৎ বয়রাগাছ থেকে একটা শুকনা ডাল ভেঙে পড়ে তার মাথার ওপর। গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিশুটি মারা যায়।
আজ দুপুর ১২টার দিকে নাটোর শহরের বঙ্গজল এলাকায় রানি ভবানীর রাজবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রাজু নাটোর শহরের বলারিপাড়া মহল্লার রাজন দাসের ছেলে। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তাদের গ্রামের বাড়ি সিংড়ার স্থাপনদীঘি গ্রামে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবদুর রব প্রথম আলোকে বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়িতে ঢুকে গোলচত্বরের পাশে একটা পুরাতন বয়রাগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছিল রাজু। হঠাৎ তিন হাতের মতো লম্বা একটি শুকনা ডাল পড়ে তার মাথা ফেটে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় শিশুটিকে তিনি একটা অটোরিকশায় তুলে পাশের একটি ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যান। সেখানে মাথায় ব্যান্ডেজ দিয়ে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে পুঠিয়া এলাকায় সে মারা যায়। পরে রাজশাহী মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তার লাশ বাড়িতে এসে পৌঁছায়নি।
এদিকে শিশুটির মৃত্যুতে পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কেউ নেই। রাজুর বাবা রাজন দাস বলেন, তাঁর তিন ছেলে। রাজু সবার ছোট। স্থানীয় একটা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তিনি রিকশা চালিয়ে সংসার চালান।
বঙ্গজল এলাকার রেজাউল করিম বলেন, প্রতিদিন শত শত মানুষ টিকিট কেটে রাজবাড়িতে বেড়াতে আসেন। গাছপালায় ঘেরা রাজবাড়ির ছায়ায় বিশ্রাম নেন, ছবি তোলেন। অথচ রাজবাড়ি ব্যবস্থাপনায় জড়িত ব্যক্তিরা এসব গাছপালা দেখাশোনা করেন না। পুরাতন বা মরা ডালপালা কেটে ফেলেন না। এ জন্য রাজুর মতো নিষ্পাপ একটা ছেলে অসময়ে মারা গেল। তার পরিবার এ কষ্ট কীভাবে সামলাবে, প্রশ্ন করেন তিনি।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রাজবাড়িতে একটা ছেলে আহত হয়েছে বলে শুনেছেন। কিন্তু পরে মারা যাওয়ার বিষয়টি জানেন না। এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে অবহেলাজনিত মৃত্যু কি না, খতিয়ে দেখা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :