রাজশাহীতে গোদাগাড়ীর ঝালপুকুর গ্রামের চড়ক মেলায় জীবনসঙ্গীর খোঁজে ছুটে আসেন সাঁওতাল তরুণ-তরুণীরা। প্রতিবছরই পহেলা বৈশাখে আয়োজিত এ মেলা থেকে তারা খুঁজে নিতে পারেন জীবনসঙ্গী, পছন্দ হলেই ধুমধাম করে হয় তাদের বিয়ে। তবে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসায় আগের মতো আর জীবনসঙ্গী মিলছে না এ মেলায়।
এ বছরও পহেলা বৈশাখের দিন চড়ক মেলায় উৎসবে মেতে উঠেন সাঁওতাল জনগোষ্ঠী। বেশ জমজমাট ছিল আয়োজন। অংশগ্রহণ করেন সব বয়সি মানুষ। সাঁওতাল মেয়েরা আসেন সেজেগুঁজে; ছেলেরাও আসেন পরিপাটি হয়ে।এ বছর মেলায় আসা রাজেন মার্ডি বলেন, এ মেলা আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য। অনেকেই জীবনসঙ্গীর খোঁজ পেয়েছেন এ মেলাতেও। তবে একই গ্রামের মেয়েদের পছন্দ করার নিয়ম নেই। অন্য গ্রামের মেয়ে পছন্দ হলে প্রথমে আলাপ করা হয় ৷ পরে তথ্য আদান-প্রদান করে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা হলে পারিবারিকভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়।পছন্দ হওয়ার আশায় তরুণ-তরুণীরা বেশ সেজেগুঁজে আসেন এ মেলায়।
মেলা সম্পর্কে স্থানীয় গণেশ মাঝি জানান, চৈত্রসংক্রান্তির রাতে চড়কপূজা হয়। চাঁদের আলোয় রাতজুড়ে মাদল-বাঁশির তালে তালে আদিবাসী মেয়েরা নাচগান করেন। সকালের লাল সূর্যের মিষ্টি আভায় চড়ক ঘুরিয়ে মেলা শেষ করা হয়। তবে ২০/২৫ বছর ধরে রাতে আর মেলা বসে না।তিনি জানান, রাতের মেলা বন্ধের সাথে সাথে নাচ-গানের ঐতিহ্য যেন হারিয়ে গেছে। তবে এখনো সাঁওতাল মেয়েরা সেজেগুঁজে মেলায় আসেন বর খুঁজতে, আর যুবকেরা আসেন কনে খুঁজতে। কেউ পান, কেউ পান না।
মেলার আয়োজকরা জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মেলা হারিয়েছে তার ঐতিহ্য। কমেছে জীবনসঙ্গী বাছাইয়ের প্রাচীন এ ধারা। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসায় বদলে গেছে জীবনসঙ্গী খোঁজার এ ধরনও। বেশির ভাগ উপজাতি ছেলেমেয়ে এখন বিদ্যালয়মুখী। তাই জীবনসঙ্গী খুঁজতে আরো অনেক মাধ্যমের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন তারা। আগের মতো জীবনসঙ্গী খুঁজছেন না এ মেলায়। দিনব্যাপী আয়োজিত এ মেলায় বাহারি চুড়ি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুক ও মাটির তৈরি তৈজসপত্রসহ গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দা, কুড়াল, হাঁড়ি-পাতিলসহ সব পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন মেলায়।
আপনার মতামত লিখুন :