কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আট যাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় নতুন একটি মামলায় সাবেক কাউন্সিলর আবদুল হালিম (৪৮) গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কুমিল্লা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) সদস্যরা উপজেলার মিয়াবাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন।
আবদুল হালিম চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। তিনি চাঁন্দিশকরা মুন্সি বাড়ির আবুল কাশেমের ছেলে। হালিমকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বলেন, “গ্রেপ্তারের পর আবদুল হালিমকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কার্যালয়ে রাখা হয়েছে এবং তাঁকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।”
২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জগমোহনপুর এলাকায় একটি বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে আটজন যাত্রী মারা যান এবং কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এই ঘটনাটি জাতির জন্য এক কলঙ্কজনক মুহূর্ত ছিল। ঘটনার পরপরই পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং জানানো হয় যে পেট্রলবোমাটি বাসটির ভিতরে নিক্ষেপ করা হয়, যা ভেতরে থাকা যাত্রীদের পুড়িয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনায় প্রথমে চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরিদর্শক নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে প্রথম মামলা করেন। এই মামলায় জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে প্রধান আসামি করা হয়, এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেও হুকুমের আসামি করা হয়। মামলায় মোট ১৩০ জনের নাম ছিল, এবং অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই মামলায় আবদুল হালিমের নাম ছিল ১১৬ নম্বর আসামি হিসেবে।
মামলার পর থেকে আবদুল হালিম আত্মগোপন করেছিলেন এবং পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার মিয়াবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মোহাম্মদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আবদুল হালিম দীর্ঘদিন ধরেই পলাতক ছিলেন। পুলিশ তাকে ধরতে কাজ করছিল এবং অবশেষে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।”
২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঘটনাটি ঘটার পর প্রথম মামলা দায়ের হয় এবং পেট্রলবোমা হামলার এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারগুলো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ওই দিন সকালে একটি যাত্রীবাহী বাসে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে, যার ফলে ওই বাসের আটজন যাত্রী মারা যান এবং অন্যরা আহত হন। এই ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালাতে থাকে। এর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম উঠে আসে, যার মধ্যে রাজনৈতিক নেতারাও ছিলেন।
অন্যদিকে, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই ঘটনার পর তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয় এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই হামলার জন্য একে অপরকে দায়ী করে। তবে এখনও পুরো ঘটনার তদন্ত শেষ হয়নি এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আসামি গ্রেপ্তার হতে পারেনি।
আবদুল হালিমের গ্রেপ্তার নিয়ে স্থানীয় জনগণ ও নিহতদের পরিবার মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই এই গ্রেপ্তারকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে, একই সাথে কিছু মানুষ এই গ্রেপ্তারের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন।
এই মামলার তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে এবং প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃত আবদুল হালিমকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনগত প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারগুলো ন্যায়বিচার পেতে এবং অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করে আসছে। এখন দেখার বিষয়, মামলাটি কিভাবে শেষ হয় এবং আসামিরা কি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে।
চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত আবদুল হালিমের বিচার প্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে জাতীয় গুরুত্বের বিষয়। এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট ঘটনার বিচার নয়, বরং পুরো দেশে চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতেও গুরুত্বপূর্ণ। গ্রেপ্তার ও বিচার প্রক্রিয়া আরও আরও স্পষ্টতা ও সঠিকতা নিয়ে চলবে, যাতে সকল পক্ষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।
4o mini
আপনার মতামত লিখুন :