দিন পেরোলেই চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ দিনটিকে ঘিরে ঝিকরগাছার গদখালিতে এখন বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। দেশি বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফুলের পসরা নিয়ে বসে আছে গদখালী এলাকার ফুল চাষিরা। তবে ভারতীয় ফুলের আমদানি বেশি হওয়ায় ফুল চাষীদের মুখে হাসি নেই। ক`দিন আগেও ৩০ টাকা দরে গোলাপ বিক্রি হলেও গত ৩ দিনে ফুলের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত বছরের তুলনায় এবার ফুলের দাম কম। প্রকারভেদে ৮ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে গোলাপ।
ঢাকার ফুল ব্যবসায়ীরা গোলাপের পাশাপাশি বিদেশি জাতের ফুল গ্লাডিওলাস ৮ থেকে ১১ টাকা দরে এবং রজনীগন্ধা ৭-৮ টাকা দরে কিনে নিয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ১ লা ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ভারত থেকে ফুল আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৫৫ কেজি। প্রতি কেজি ফুলের আমদানি মূল্য প্রায় ২৫০ টাকা। গদখালী ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, দেশে যথেষ্ট পরিমাণ ফুল উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব অথচ একশ্রেণির মুনাফা লোভীরা দেশের টাকা বাইরে দিয়ে ফুল আমদানি করছে। এতে অর্থনীতি এবং চাষিরা সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বেনাপোল থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে যশোর রোডের পাশেই গদখালীর ফুলের বাজার। সকাল থেকে রাত অবধি এলাকার চাষিরা বসে আছে বিভিন্ন ধরনের ফুল নিয়ে। জমজমাট ফুলের বাজারে ছুটে যাচ্ছে নানা পেশার মানুষ। তবে উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। স্থানীয় পানিসারা গ্রামের ইসমাইল হোসেনের কৃষি খামারে দোল খাচ্ছে বাহারি রঙের চোখ ধাঁধানো টিউলিপ। ইউরোপের গন্ডি ছাড়িয়ে টিউলিপ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ফুলের রাজ্যখ্যাত গদখালীর মাঠে। এ কারণে গদখালিতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে প্রতি বছরই গদখালির ফুল চাষিরা নতুন জাতের ফুল উপহার দিয়ে থাকেন। গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, লং স্টিক রোজের পর এবারের ভালোবাসা দিবসে ফুলপ্রেমীদের জন্য নতুন উপহার টিউলিপ।
গদখালির ফুল চাষি লিটন হোসেন বলেন, দেশে বিদেশি জাতের টিউলিপ ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উন্নত জাতের এ ফুল চাষে সরকারি সহায়তা পেলে সম্ভাবনাময় ফুল চাষে সৃষ্টি হবে নতুন বিপ্লবের। খুলবে ব্যবসার নতুন দ্বার।
গদখালীতে ঘুরতে আসা মনিরুল ইসলাম বলেন, আগে গুগুল-ইউটিউবে এই ফুল দেখেছি। সরাসরি দেখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। তিনি উপহার জন্য ৫০ টি গোলাপ ফুল কিনেছেন বলে জানালেন।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, নতুন জাতের ফুল চাষের ইচ্ছা থেকেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর `বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের` আওতায় নেদারল্যান্ডস থেকে এই ফুলের জাত আনা হয়েছে। টিউলিপের প্রায় ১৫০টি জাত রয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে আট প্রজাতির চাষ হচ্ছে এখানে। ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো হবে।
আপনার মতামত লিখুন :