বাংলাদেশ সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

পাহাড়ি- বাঙ্গালি সংঘর্ষে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিকান্ড, তিন পার্বত্য অঞ্চলে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ০৯:১১ পিএম

পাহাড়ি- বাঙ্গালি সংঘর্ষে ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিকান্ড, তিন পার্বত্য অঞ্চলে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা

লারমা স্কয়ারে অগ্নিকাণ্ড, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিক্ষোভ সমাবেশ

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার লারমা স্কয়ারে গতকাল (বৃহস্পতিবার) পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে বাঙ্গালীদের দ্বারা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দোকান ও ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ আসে

ঘটনার পূর্বসূত্র:

খাগড়াছড়ি শহরের নোয়াপাড়া এলাকায় গত বুধবার ভোরে মোহাম্মদ মামুন (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মারধর করা হয়। পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত মামুনের মামা মো. নুর হোসেনের বক্তব্য মামুনকে পানখাইয়া পাড়ার স্লুইসগেট এলাকায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পেয়ে হাসপাতালে নেয়া হয়, তখন তার মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিলো। তবে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন মৃধার দাবী গণপিটুনি নয় বরং মোটরসাইকেল চুরি করে পালানোর সময় বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে মামুন আহত হয়।

এই ঘটনার প্রতিবাদে দীঘিনালায় বিক্ষোভ মিছিল করে  ৩০০ থেকে ৪০০ বাঙালি শীক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা।  বিক্ষোভ মিছিলটি জামতলি ও বোয়ালখালী বাজার থেকে লারমা স্কয়ারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পাহাড়িরা মিছিলে বাধা প্রদান করে। এখানে থেকেই ঘটে সংঘর্ষের সূত্রপাত।  সংঘর্ষের এক পর্যায়ে লারমা স্কয়ার ও দীঘিনালা কলেজের পাশের ৫০-৬০টি ঘরবাড়ি ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় স্থানীয় বাঙ্গালী বাসিন্দাদের দাবী মামুন হত্যার বিচারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবেই মিছিল যাচ্ছিলো। পরে পাহাড়িরা এসে বাধা দেয়ায় ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে লারমা স্কয়ার এলাকার পাহাড়ি বাসিন্দারা বলেন  মিছিলে পাহাড়িরা কেউ বাধা দেননি। বরং মিছিলের মধ্য থেকেই বিতর্কিত ভাবে সংঘর্ষের শুরু হয়।

তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামায় পরিনত হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে শহরের রাজবাড়ীর মাঠ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শীক্ষার্থীরা। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে জড়ো হয়ে সমাবেশ করে। সমাবেশ সঞ্চালনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যার এছাড়াও বক্তব্য রাখে বান্দরবান মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সভাপতি অংশৈসিং মারমা, শিক্ষার্থী বিটন তঞ্চঙ্গ্যা, জন ত্রিপুরা, মাখ্যাই মারমা, টনয়া ম্রো সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

সমাবেশে বক্তারা প্লাকাড ও ব্যানার ব্যবহার করে পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড়িদের বিভিন্নভাবে নির্যাতনের অভিযোগ আনে। এছাড়াও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।

বর্তমানে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিন পার্বত্য এলাকায় বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। পাহাড়ি এবং বাঙ্গালীদের চিরকালের শত্রুতায় এ যেন আগুনে ঘি ঢালার মতই অবস্থা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

ঘটনার প্রতিবাদে সারাদেশে তথা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে চলছে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। ঘটনার নেপথ্যে থাকা পরাশক্তিকে খুজে বের করে উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী গোটা দেশবাসীর।

 

Link copied!

সর্বশেষ :