বাংলাদেশ শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১

তীব্র তাপপ্রবাহে মরছে মাছ আতঙ্কে খামারের চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ০৮:৩৩ পিএম

তীব্র তাপপ্রবাহে মরছে মাছ আতঙ্কে খামারের চাষিরা

খামারে মাছ মরে ভেসে উঠেছে । ছবি : সংগৃহীত

মাছের খামারের বড় পুকুরের দুপাশে শুধু মরা মাছের সারি। কয়েকজন শ্রমিক দ্রুত একটি নৌকায় মাছ তুলছেন। কয়েকদিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহে এভাবে মাছ মরে যাওয়ায় মৎস্য খামারের মালিক-কর্মচারীরা চরম উদ্বিগ্ন।

88 হেক্টর জলাধার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের মিরসরাইয়ে মুখলি প্রকল্প এলাকা গড়ে তোলা হচ্ছে। আজ শনিবার সকালে রবি আল হুসেনের খামারে এমন ছবি দেখা গেছে। মাছটি মারা গেলে রবিউলের হাত মাছটির মাথায় রাখা হয়। তাপমাত্রা না কমানো পর্যন্ত এই সমস্যা দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। শুধু রবিউল নয় মীররাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় মাছের খামার বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মৎস্যবিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা বলছেন, প্রচণ্ড তাপ পানির পিএইচ বাড়ায় এবং অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এতে মাছ মারা যায়।

মাছ চাষি রাবি আল হুসাইন জানান, অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে তার খামারে মাছ মারা যাচ্ছে। তিনি ১০ বছর ধরে মাছ চাষ করছেন। এর আগে কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি সে। তিনি তার ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করতে থাকেন এবং মাছ রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

একই এলাকার কৃষক। আবু তাহির জানান, তিনি ১৮ হেক্টর জমিতে মাছ চাষ করেন। তার খামারের কিছু মাছ মারা গেছে। সব ব্যবসাই এখন ঝুঁকির মুখে। এ অবস্থায় তিনি মাছ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন। বৃষ্টি না হলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

মিরসরাই উপজেলায় এ বছর প্রায় ৭,৮০৬ একর জলাশয়ে বাণিজ্যিকভাবে মিঠা পানির মাছ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ইছাখালী, ওছমানপুর, ধুম ইউনিয়ন ও মুখুরী প্রকল্প এলাকায় ৫,৭৪৬ একর জলাশয় অবস্থিত। এ বছর উপজেলায় মাছের উৎপাদন প্রায় ৪৮ হাজার টন।

স্থানীয় মৎস্য চাষিরা জানান, গত ৩০ বছরে মিরসরাই উপজেলায় জমিতে বাঁধ দিয়ে শতাধিক মাছের খামার গড়ে উঠেছে। তাই অধিকাংশ জলাধার অগভীর। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে জলাধারে পানি কমতে থাকে। তবে অন্যান্য বছর তাপমাত্রা কম থাকায় মাছের খামারের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে এ বছর বৈশাখ মাসে বৃষ্টি না হওয়া ও গরম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারের মাছ মরতে শুরু করেছে। আজকাল, বেশিরভাগ চাষিরা তাদের চাষ করা মাছের সুরক্ষার বিষয়ে একটি হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন।

মিরসরাই ও সোনাগাজী উপজেলায় মৎস্যজীবীদের নিয়মিত চিকিৎসা ও পরামর্শ দেন মৎস্য চিকিৎসক মো. নেয়ামুল হোসেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম সংবাদকে বলেন, তাপপ্রবাহের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় রাতে পানির পিএইচ বেড়ে যাচ্ছে এবং অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। অনেক খামারে সকালে মাছ মারা যায়। মীরসরাই ও সোনাগাজী উপজেলার চারণভূমি এলাকায় অগভীর মাছের খামারের কারণে আরও সংকট দেখা দিয়েছে।

আলাপকালে মিরসরাই উপজেলার প্রধান মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ প্রথম সংবাদকে বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে পানি সরবরাহ, পরিমিত পরিমাণে চুন প্রয়োগ এবং জরুরি প্রয়োজনে অক্সিজেন ট্যাবলেট বা পাউডার ছড়িয়ে দিলে কৃষকরা উপকার পেতে পারেন। কৃষকরা মৎস্য বিভাগকে জানালে অবিলম্বে এ বিষয়ে সেবা প্রদান করা হবে।

Link copied!

সর্বশেষ :