বাংলাদেশ শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১

আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড চট্টগ্রামে

দৈনিক প্রথম সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ১২:৫৬ পিএম

আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড চট্টগ্রামে

চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। এরই মধ্যে চলতি মাসে চট্টগ্রামে এ বছরের সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে। শুধুমাত্র সেপ্টেম্বরেই এই অঞ্চলে ৬৩৪ জন আক্রান্ত হয় এবং ৮ জন মারা যায়। গত ৮ মাসে এই জেলায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছিল ৫৯৮ জন। ফলস্বরূপ, এই মাসে রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে।  

এদিকে মশাবাহিত রোগ এর বিস্তার ও মৃত্যুর হার নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ। পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপজেলার সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলাদা ওয়ার্ড খোলার নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন। জেলা সিভিল সার্জন অফিস চট্টগ্রাম সিটি হেলথ করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগকে মশা নির্মূলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে। সিটি করপোরেশনে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম খুবই নগন্য।

জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় মোট ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে এখন ১২৩২ জন। পুরো বছরের অর্ধেকেরও বেশি রোগী শুধুমাত্র ২৪ সেপ্টেম্বর সনাক্ত করা হয়েছে। উপরন্তু, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বিগত আট মাসে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। চলতি মাসে নোয়াখালী জেলায় ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ কক্সবাজার ও খাগড়াছড়িসহ অন্যান্য জেলার বাসিন্দা।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬৬ জন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা আগস্টে ছিল ২০২ জন, জুলাই মাসে ১৯৮ জন, জুনে ৪১ জন, মে মাসে ১৭ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মার্চে ২৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৫ জন এবং জানুয়ারিতে ৬৯ জন৷

সূত্র আরো জানায়, এ বছর সর্বমোট ডেঙ্গু জ্বর এ আক্রান্তদের মধ্যে ৭২১ জন নগরবাসী এবং ৫১১ জন উপজেলাবাসী। এদের মধ্যে রয়েছে ৬৬৯ জন পুরুষ, ৩৩০ জন মহিলা এবং ২৩৩ জন শিশু। এছাড়া নিহত ১৩ জনের মধ্যে তিনজন পুরুষ, আটজন নারী ও দুই শিশু রয়েছে। গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় ১৪ হাজার ৮৭ জন যাদের মধ্যে ১০৭ জন মারা যান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা ডেঙ্গু রোগী সংখ্যার আসল চিত্র নয়। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ডেঙ্গু সম্পর্কে তথ্য পেয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তাই সঠিক আক্রান্তের সংখ্যার তালিকা করা প্রায় অসম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত বর্ষাকালে বাড়ে এবং পরে কমে যায়। কিন্তু বর্তমানে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে। ফলে বর্ষার পরে চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়ছে। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আবার বাড়তে পারে। দেশের ৬১ শতাংশ এলাকা ডেঙ্গুর হুমকিতে রয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীর ম্যালেরিয়া ও মশা নিয়ন্ত্রণ করপোরেশনের একজন কর্মচারী মো. সরফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই সিভিল সার্জনের কার্যালয় অসুস্থ রোগীদের নম্বর ও ঠিকানার তালিকা করছে। এরপর ঠিকানা যাচাই করে ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর মধ্যে আন্দরকিল্লা, বায়েজিদ বোস্তামী ও বাকলিয়া থানা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

শহরের অন্যান্য অংশের তুলনায় এই থানাগুলো বেশি ঘনবসতিপূর্ণ। এমনকি এখানে এডিস লার্ভার উচ্চ ঘনত্ব রয়েছে। তাই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বেশি। এসব এলাকায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ কমাতে প্রতিদিনই ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে জমে থাকা পানি এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র। তাই জমে থাকা পানির ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। প্লাস্টিকের বাটি, টায়ার এবং ফুলের টব বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে থাকে। এগুলোর দিকে নজর দিলে রোগীর সংখ্যা কমবে।

Link copied!

সর্বশেষ :